আজ আলোচনা করব বেদাঙ্গ (কল্পসুত্র) নিয়ে।
৬ ষ্ঠ বেদাঙ্গ হলো কল্প।কল্প গুলি সুত্রাকারে গ্রথিত। তাতে যেমন যজ্ঞের বিধি উল্লেখ্য আছে তেমনি গার্হস্থ্য জীবনের সংস্কার প্রভৃতির আলোচনাও আছে। এদের ৪ টি শ্রেণী আছে।
১ 🙂 – শ্রৌতসুত্র।
২ 🙂 – গৃহ্যসূত্র।
৩ 🙂 – ধর্মসুত্র।
৪ 🙂 – শুল্কসুত্র।
ব্রাহ্মণে যে সমস্থ যজ্ঞের উল্লেখ আছে তাদের বলা হয় শ্রৌত যজ্ঞ, কারণ ব্রাহ্মণ(গ্রন্থ) শ্রুতির অংশ।
এই যজ্ঞ গুলির সং্খ্যা ১৪ টি।
৭ টি হবি যজ্ঞ ( অর্থাৎ ঘৃতাহুতি দিয়ে নিস্পন্ন করতে হয়) এবং ৭টি সোম যজ্ঞ ( সোমরস আহুতি দিতে হয়)।
শ্রৌত সুত্রে এই ১৪টি যজ্ঞের বিস্তারিত বিবরণ আছে। এর জন্য ৩ টি অগ্নির আধান করতে হয়। ঃ-
১ 🙂 গার্হপত্য।
২ :)- আহবনীয়।
৩ :)- দক্ষিণ।
এই ১৪ টি ছাড়া আরো অতিরিক্ত যজ্ঞ আছে। তাদের ‘স্মার্ত’ যাগ বলা হয়।
তাতে ঔপাসন, হোম,বৈশ্বদেব প্রভৃতি ৭ টি যজ্ঞের বিধান আছে। এদের আলোচনা পাই গৃহ্যসুত্রে।
স্মার্ত কর্মগুলি স্মার্ত অগ্নিতে করা হয়। স্মার্ত অগ্নির অন্য নাম বৈবাহিক, গৃহ্য, অবিসথ্য, দশপূর্ণমাস, পশুযাগ, পিতৃযাগ।
হিন্দুর জীবনে জন্ম হতে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া পযন্ত যে ১৬ টি সংস্কার পালন করতে হয় সে বিষয়ে আমরা অবহিত। কারণ বৈদিক যুগ হতে এইগুলি পালিত হয়ে আসতেছে।
এইগুলি কিভাবে সম্পাদন করতে হয় তার বিধি গৃহ্যসুত্রে আছে। ভাবতে অবাক লাগে এই সংস্কার গুলি হাজার হাজার বছর ধরে অপরিবর্তত রুপে বর্তমান আছে।
ধর্মসুত্র পরিবার কে ছড়িয়ে সমাজে পরিব্যাপ্ত। তাতে কর্তব্য অকর্তব্য, দেশাচার – লোকাচার প্রভৃতিরর বিষয়ে উপদেশ দেওয়া হয়েছে। এর আর এক নাম “সাময়াচারিক সুত্র”। এখানে সময় অর্থে বুঝতে হবে সর্বসম্মত অনুশাসন। সুতরাং তাতে আছে সর্বসম্মত অনুশাসন এবং আচরণ সমন্ধে উপদেশ।
তারপর শুল্কসুত্র। তার সাথে কল্পসুত্রের ঘনিষ্ঠ সংযোগ আছে। তাতে আছে নানা ধরনের যজ্ঞবেদির পরিমাণ ঠিক করবার নিয়ম। সুতরাং শুল্কসুত্রের সঙ্গে তা অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। ঠিক বলতে কি এখানে ভারতীয় জ্যামিতিকে বীজ আকারে পাই।
প্রতি বেদের সঙ্গে সংযুক্ত নানা শ্রেণীর কল্পসুত্র পাওয়া যায়। তাদের একটি তালিকা পরবর্তী পোষ্টে দেয়ার চেষ্টা করব।
তথ্য সংগ্রহে — বিকাশ মজুমদার।
All posts by Bikash
রাধা কৃষ্ণের প্রেম সত্য নাকি কাল্পনিকচরিত্র?
মূল মহাভারত, চার বেদ, ১০৮টি উপনিষদ, গীতার ১৮টি অধ্যায়ের ৭০০ শ্লোক, হরিবংশ এবং বিষ্ণু পুরান- কোথাও রাধার কোনো উল্লেখ নেই। এই সমস্ত বিষয়, বিচার-বিশ্লেষণ করে, সাহিত্য সম্রাট ঋষি বঙ্কিমচন্দ্র, তার ”কৃষ্ণ চরিত্র” গ্রন্থে এক বিশাল প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেছেন,
“তাহা হইলে, এই রাধা আসিলেন কোথা হইতে ?”
রাধার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরিত্রে যথেষ্ট কালিমা লেপন করা হয়। কৃষ্ণকে বিশ্বপ্রেমিক প্রমান করতে বলা হয় কৃষ্ণলীলা; আবার কেউ কেউ নিজেদের লাম্পট্যকে ঢাকা দেওয়ার জন্য কৃষ্ণের উদাহরণ টেনে অপরকে প্রশ্ন করে বলে, ”কৃষ্ণ করলে লীলা, আর আমরা করলে বিলা ?” এই ব্যাপারটি এতদূর গড়িয়েছে যে, এ নিয়ে গানও বানানো হয়েছে –
“যমুনারও ঘাটে যাইও না গো রাধা
ওইখানেতে বইস্যা আছে, কানু হারামজাদা।”
এগুলো ছাড়াও রাধা-কৃষ্ণকে নিয়ে সমগ্র বাংলা এলাকায় আরো অনেক গান কবিতা আছে, যেগুলোর বেশির ভাগই আদি রসাত্মক এবং সেগুলো কৃষ্ণ চরিত্রের নেগেটিভ দিকই প্রকাশ করে।
এছাড়াও বলা হয়, কৃষ্ণ শুধু রাধার সাথেই প্রেম করে নি, সে নাকি প্রেম করেছে, রাধার সখীদেরও সাথে। রাধার অস্তিত্ব স্বীকার করে নিলেও তো এই ব্যপারটা একেবারে অসম্ভব। কারণ, কৃষ্ণ রাধার সাথে প্রেম করা কালীন, রাধার সখীদের সাথেও প্রেম করবে, আর সেটা রাধা মেনে নেবে, এই তত্ত্ব শুধু নির্বোধদের পক্ষেই মেনে নেওয়া সম্ভব। কারণ, বিশ্বাস না হলে, আপনি যদি পুরুষ হন, একই সাথে, একে অপরের বান্ধবী, এমন ২/৩ জন মেয়ের সাথে প্রেম করে দেখেন আর তারপর তাদের হাইহিলের আঘাতে আপনার শরীরের অবস্থা দেখেন, তাহলেই নিজের অবস্থা দেখেই বুঝতে পারবেন, রাধার সাথে প্রেম করা কালীন, কৃষ্ণ, রাধার অন্য সখীদের সাথেও প্রেম করেছিলো কি না ?
এবার বঙ্কিমচন্দ্রের সেই লাখ টাকার প্রশ্নে ফিরে যাই, ”তাহা হইলে, # এইরাধাআসিলেনকোথ
াহইতে ?”ব্যাকরণ দিয়েই শুরু করি, যিনি আরাধনা করেন, তাকে এক কথায় বলা হয় রাধা। এই সূত্রে পৃথিবীর সমস্ত নর-নারী, যারা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ভজনা বা আরাধনা করেন, তারা রাধা। কিন্তু রাধা শব্দটি নারীবাচক হলো কিভাবে ?
জীবাত্মা বা মানুষ যখন, পরমাত্মা বা ভগবানের কাছে প্রার্থনা করে, তখন শক্তিশালী ভগবানের কাছে মানুষ- হীন, দুর্বল ও অসহায়। মেয়েরা অন্যভাবে নেবেন না, আমাদের সামাজিক বাস্তবতাতেও শক্তিশালী পুরুষের কাছে নারীরা এমনই- হীন, দুর্বল ও অসহায়। এভাবে দুর্বল ও অসহায় মানুষ, যারা নারীর প্রতীক, তাদের বোঝাতে রাধা শব্দটি নারীবাচক শব্দে পরিণত হয়েছে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যেহেতু একজন পুরুষ এবং তার ভজনা বা আরাধনাকারীরা যেহেতু রাধা এবং কার্যকারিতার দিক থেকে রাধা যেহেতু একটি স্ত্রীবাচক শব্দ, তাই পরমাত্মার প্রতি জীবাত্মার এই আত্মসমর্পণ, কৃষ্ণের প্রতি রাধার আত্মসমর্পনের রূপ পেয়েছে এবং বিরহের প্রচণ্ড ব্যাকুলতা ছাড়া ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে লাভ করা যেহেতু সম্ভব নয়, তাই রাধা রূপী জীবাত্মা, ক্রমে ক্রমে ভক্ত মানসে নারী রূপী রাধায় পরিণত হয়ে মূর্ত হয়ে উঠেছে। আর আমরা সনাতন ধর্মীরা যেহেতু, বেদ এ বর্ণিত দেবতাদের রূপ ও তাদের কার্যপ্রণালীকে কল্পনায় নিয়ে ঐসব দেবতাদের মূর্তি তৈরি করতে খুব পারদর্শী, সেহেতু আধ্যাত্মিকভাবে প্রতীকী রাধাকে খুব সহজেই রক্ত মাংসের নারী বানিয়ে কৃষ্ণের পাশে দাঁড় করিয়ে দিয়েছি।
মহাভারত, যা প্রায় ৫ হাজার বছর আগে লেখা, যা কৃষ্ণের প্রামান্য জীবনী, তাতে রাধার কোনো উল্লেখ নেই; সুতরাং গীতাতেও রাধার কথা থাকা সম্ভব নয়। এমন কি বিষ্ণু পুরান, যে বিষ্ণুই কৃষ্ণরূপে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন, সেই পুরানেও রাধার কোনো উল্লেখ নেই। কিন্তু ব্রহ্মবৈবর্ত পুরানের মতো কিছু অর্বাচীন বা নতুন পুরানে রাধা উল্লেখ আছে, এর কারণ কী ? এছাড়াও বৈষ্ণব পদাবলী, যা রাধার, কৃষ্ণের প্রতি প্রেম বিরহ নিয়ে লেখা একাধিক কবির পদ্য এবং শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য, যা মূলত একটি যাত্রাপালা, যাতে রাধা-কৃষ্ণের প্রেম একেবারে মাখামাখি, কৃষ্ণকে নিয়ে এসব রস সাহিত্য সৃষ্টিরই বা কারণ কী ?
কিছু আধুনিক পুরান এবং মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যে রাধার উপস্থিতিকে প্রামান্য করার জন্যও অবতারণা করা হয়েছে নতুন কাহিনীর। যার বিস্তৃতি ¯^M© থেকে মর্ত্য পর্যন্ত। এই কাহিনী অনুসারে, পৃথিবীতে রাধার বিয়ে হয়েছিলো নাকি আয়ান ঘোষ নামের এক ব্যক্তির সাথে, এই আয়ান ঘোষ নাকি ছিলো আবার নপুংসক এবং ছিলো কৃষ্ণের মামা। কৃষ্ণ যেহেতু জন্মের পর এক ঘোষ পরিবারে লালিত পালিত হয়েছিলো, তাই কাহিনীটি খুব সহজেই মানুষের বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছিলো। এই সূত্রে রাধা ও কৃষ্ণের সম্পর্ক আবার মামী ও ভাগনা। মামীর সাথে ভাগনার প্রেম, এটাও আবার এক ন্যাক্কারজনক ঘটনা, যার কালিমা লেপন করা হয় কৃষ্ণের চরিত্রে।আয়ান ঘোষ কেনো নপুংসক হলো এবং কৃষ্ণ কেনো মামীর সাথে প্রেম করতে গেলো, এই ব্যাখ্যাকে যুক্তিসংগত করার জন্য এই আবার এক ন্যাক্কারজনক ঘটনা, যার কালিমা লেপন করা হয় কৃষ্ণের চরিত্রে।
আয়ান ঘোষ কেনো নপুংসক হলো এবং কৃষ্ণ কেনো মামীর সাথে প্রেম করতে গেলো, এই ব্যাখ্যাকে যুক্তিসংগত করার জন্য এই কাহিনীতে আছে একটি স্বর্গীয় অধ্যায়; সেটি এরকম:
ভগবান বিষ্ণু, যিনি নারায়ণ নামেও পরিচিত, তার স্ত্রী লক্ষ্মী। এজন্যই বলা হয় লক্ষ্মী-নারায়ণ, অর্থাৎ এরা এক জুটি। স্বর্গের কোনো এক দেবতা, বিষ্ণুর নিকট থেকে, যে কোনো ভাবেই হোক – এই বর পায় যে, পৃথিবীতে মানুষ হিসেবে জন্ম নেওয়ার পর, সে বিষ্ণুর স্ত্রী লক্ষ্মীকে বিয়ে করতে পারবে; কেননা, সেই সময় লক্ষ্মীও নারী রূপে পৃথিবীতে জন্ম নেবে। বিষ্ণুর স্ত্রী এই লক্ষ্মীই হলো রাধা এবং সেই দেবতা হলো আয়ান ঘোষ।
এখন, আয়ান ঘোষরূপী ঐ সাধারণ দেবতা এবং রাধারূপী লক্ষ্মীর মধ্যে বিবাহ হলে তো দুজনের মধ্যে যৌনসম্পর্ক অনিবার্য। কিন্তু বিষ্ণু, যিনি ভগবান, তার স্ত্রীর সাথে তো অন্য কোনো দেবতার যৌন সম্পর্ক হতে পারে না, আবার বিষ্ণু নিজেই যেহেতু সৃষ্টিকর্তা এবং আয়ান ঘোষ হিসেবে ঐ দেবতাকে পৃথিবীতে সৃষ্টি করার দায়িত্বও তারই, তাই বিষ্ণু, আয়ান ঘোষকে পৃথিবীতে জন্ম দিলেন যৌনক্ষমতাহীনভাবে, যাতে সে রাধা অর্থাৎ লক্ষ্মীর সাথে বিয়ের পর কোনো যৌনসম্পর্ক না করতে পারে। এই সময় বিষ্ণুও পৃথিবীতে অবতীর্ণ হলেন কৃষ্ণ রূপে এবং রাধার সাথে লীলা করলেন।
হিন্দু ধর্মের গ্রন্থের বহর এত বিশাল যে, এক জীবনে এর সবকিছু আয়ত্ব করা খুব কম হিন্দুর পক্ষেই সম্ভব। হিন্দু সমাজের এই দুর্বলতার সুযোগে এই ধরণের কাল্পনিক কাহিনীগুলো হিন্দু সমাজে ভাইরাসের মতো খুব দ্রুত ছড়িয়েছে, আর ১৮৬০/৭০ সালের আগে, বঙ্কিমচন্দ্রের মতো এই কাহিনীগুলোর সত্যতা খুঁজে দেখারও কেউ তেমন চেষ্টা করে নি। আরও আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, বঙ্কিমচন্দ্রের ঐ লাখ টাকার প্রশ্নের পর দেড়শ বছর কেটে গেলেও, কোনো হিন্দু ধর্মগুরু প্রকৃত সত্য উদঘাটন করে হিন্দু সমাজের এই ক্ষতগুলোকে সারানোর চেষ্টা করে নি। তাদের শুধু লক্ষ্য ছিলো এবং এখনও আছে, শিষ্য সংখ্যা বাড়িয়ে তাদের টাকা দিয়ে নিজের পকেট ভরানো আর আশ্রমের বাড়-বাড়ন্ত আরো বৃদ্ধি করা। রামকৃষ্ণ মিশনের বয়স প্রায় ১২০ বছর, ভারত সেবাশ্রম সংঘের বয়স প্রায় ৮০ বছর, এই সংগঠনগুলো কি কখনো এগুলো নিয়ে কিছু ভেবেছে, না এ বিষয়ে কোনো কাজ করেছে ?
আর ইসকন ! ইসকনের বয়স প্রায় ৫০ হলেও, ওরা হিন্দু ধর্মের এই সব ক্ষত সংস্কার করার পরিবর্তে, সাধারণ হিন্দুদের ভেতরে রোপন করা ভ্রান্ত বিশ্বাসকে সার জল দিয়ে লালন করে, তাদের পকেট ফাঁকা করতেই বেশি ব্যস্ত।
মূল মহাভারতে রাধা না থাকলেও, ২০১৩/১৪ সালে স্টার জলসা যে মহাভারত দেখালো, তাতে রাধাকে দেখানো হয়েছে- যদিও বালিকা অবস্থায় এবং খুব কম সময়ের জন্য। কিন্তু মূলে না থাকলে, এখানে রাধা এলো কোথা থেকে ? শুনেছি, এর পেছনেও ছিলো কিছু মহলের হাত।
এখন দেখা যাক, হিন্দু শাস্ত্রের আধ্যাত্মিক প্রতীকী রাধা কিভাবে জলজ্যান্ত মানুষে পরিণত হলো। এই ঘটনাগুলো ঘটেছে, ভারতে মুসলিম শাসন আসার পর হিন্দু সমাজকে ধ্বংস করতে, হিন্দুধর্মকে বিকৃত এবং হিন্দু দেবতাদের চরিত্র কালিমালিপ্ত করার পরিকল্পানার অংশ হিসেবে। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরানসহ অশ্লীলপুরানগুলো, যেগুলোতে রাধার উপস্থিতি আছে, সেগুলো এই সময়ে, মুসলিম শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায়, মুসলিম শাসকদেরকে খুশি করার জন্য লেখা।
বৈষ্ণব পদাবলী, যেখানে রাধার উপস্থিতি সবচেয়ে উজ্জ্বল, সেগুলো চৈতন্যদেবের সময়ে এবং তার কিছু পরে লেখা। এগুলো মোটামুটি অশ্লীলতা মুক্ত, কিন্তু রাধা এখানে সম্পূর্ণভাবে রক্ত মাংসের মানুষ; পরমাত্মার প্রতি জীবাত্মার প্রেম, এই পদাবলী লেখকদের হাতে পুরুষের প্রতি নারীর প্রেমে পরিণত হয়েছে।শ্রীকৃষ্ণকীর্তন কাব্য, যেটা লেখা হয় ১৩৫০ থেকে ১৪০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে। বড়ু চন্ডীদাস নামে এক কবির লেখা এই কাব্যে অশ্লীলতার ছড়াছড়ি। কৃষ্ণ, এই কাব্যে সম্পূর্ণ এক লম্পট চরিত্র। রাধা-কৃষ্ণের প্রেম, যৌনতা নিয়ে আগে লেখা পুরানগুলো থেকে রসদ নিয়ে বড়ু চণ্ডীদাস যে এই কাব্য লিখেছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, হিন্দু কবিরাই কেনো তাদের ধর্মের প্রধান পুরুষ, কৃষ্ণকে নিয়ে এমন লেখা লিখলো ?
মধ্যযুগের সব মুসলিম শাসকদের সভায় হিন্দু কবি ছিলো। ইসলামে যেহেতু কবিতা লিখা নিষেধ, তাই কোনো মুসলমানকে কবিতা লিখতে বলে বা তার কাব্য প্রতিভাকে বিকশিত করে, কোনো মুসলমান শাসক পাপের ভাগী হতে চাইতো না। এজন্য মুসলিম শাসকদের শাসন কার্যের কোথাও হিন্দুদের কোনো জায়গা না হলেও এবং তারা পাইকারিভাবে জোর জবরদস্তি করে সাধারণ গরীব হিন্দুদের মুসলমান বানালেও বা বানাতে চেষ্টা করলেও, জিজিয়া করের জন্য ধনী হিন্দুদের এবং কোনো কোনো মুসলিম শাসক ব্রাহ্মণ টাইপের জ্ঞানী হিন্দু পণ্ডিতদের হিন্দুত্ব টিকিয়ে রাখতো রাজসভায় কাব্য আলোচনা এবং তা থেকে রস আস্বাদনের জন্য। এভাবে যে সব হিন্দু, রাজসভায় কবি হিসেবে নিয়োগ পেতো, ধর্মের উপর জোর জবরদস্তি না করার জন্য তারা মুসলমান শাসকদের উপর থাকতো খুবই কৃতজ্ঞ এবং অনুগত। এই কবিদেরকে, তাদের পৃষ্ঠপোষক মুসলমান শাসকের ফরমায়েশ এবং পছন্দ অনুযায়ী কবিতা লিখতে হতো। এই পছন্দকে পাত্তা দিতে গিয়ে এবং মুসলমান শাসকদেরকে খুশি করতে গিয়েই হিন্দু কবিরা তাদের ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় হিন্দু ধর্মের মূল গ্রন্থগুলো সংস্কৃত থেকে বাংলায় অনুবাদ করার সময় বিকৃত করেছে। কারণ, ঐ কবিদের পৃষ্ঠপোষক, মুসলমান শাসকদের খুশির উপরই নির্ভর ছিলো ঐ সব দুর্বল বেতন ভোগী হিন্দু কবিদের জীবন জীবিকা। একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন, বাংলা সাহিত্যের যত হিন্দু ধর্মীয় পুস্তক, সংস্কৃত থেকে বাংলায় অনুবাদ করা হয়েছে, তার প্রায় সবগুলোই করা হয়েছে, মধ্যযুগের এই মুসলিম শাসনের সময়।
উদাহরণ স্বরূপ, কৃত্তিবাসী রামায়ণের ব্যাপারে একটু আলোচনা করছি; সংস্কৃত রামায়ণে, সীতাকে যখন রাবন ধরে নিয়ে যায়; তখন সীতা, রাবনের সাথে ভয়ংকরভাবে সাহসের সাথে তর্ক বিতর্ক করে। কিন্তু কৃত্তিবাসী রামায়ণে ঐ সময়ে সীতা একজন ভীরু ও দুর্বল মহিলা। কৃত্তিবাসী রামায়নে রামের চরিত্রও দুর্বল করে দেখানো হয়েছে এবং তাকে নপুংসক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। কেননা, কৃত্তিবাসী রামায়ণে, রামের চরিত্র নিয়ে এই প্রশ্ন উত্থাপন করার সুযোগ দেওয়া হয়েছে যে, রাম-সীতা বনে ১২ বছর এক সাথে থাকার পরেও কেনো সীতা গর্ভবতী হলো না ? কিন্তু সংস্কৃত রামায়ণের এই তথ্যকে সুকৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে যে, বনবাসে যাওয়ার আগেই রাম সীতা প্রতিজ্ঞা করেছিলো, বনে গিয়ে তারা কোনো ভোগ-বিলাসে মত্ত হবে না; তারা বনবাস কালীন ব্রহ্মচর্য পালন করবে। তো যারা ব্রহ্মচর্য পালন করবে, তাদের সন্তান হবে কিভাবে ? এইভাবে মুসলিম আমলে অনুবাদিত প্রত্যেকটি গ্রন্থ, সেটা ভারতের যে আঞ্চলিক ভাষাতেই হোক, তাকে কিছু না কিছু ভাবে বিকৃতত করা আছে।
যা হোক, ইংরেজরা, মুসলমানদের মতো সরাসরি হিন্দুদের জীবন ও ধর্মে আঘাত না করলেও, হিন্দু সংস্কৃতিকে সুকৌশলে ধ্বংস করার পরিকল্পনা হিসেবে খ্রিষ্টান সমাজের অনুরূপ ক’রে রাজা রাম মোহন রায় এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদু প্রিন্স দ্বারাকানাথের মাধ্যমে বা্রহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করে। ব্র্রাহ্মদের আচার আচরণ খ্রিষ্টানদের মতো হওয়ায়, সেই সময়ের নিষ্ঠাবান হিন্দুরা ব্রাহ্মদেরকে খ্রিষ্টানই মনে করতো। এই ব্রাহ্মসমাজের নেতাদের পরামর্শে ইংরেজরা বেদকে বিকৃত করার পরিকল্পনা করে। ইতোমধ্যে বাংলায় তারা ছাপাখানা স্থাপন করে ফেলেছিলো এবং সেখান থেকে প্রথম মুদ্রিত বই রূপে বাইবেল প্রকাশ করেছিলো। এরপর তারা বেদ প্রিন্ট করে। সেই সময় অথর্ববেদের শেষের দিকে অপ্রাসঙ্গিকভাবে কয়েকটি দুর্বল শ্লোক যুক্ত করে এবং তার মধ্যে আল্লাহ, মুহম্মদ এরকম কয়েকটি ইসলামিক শব্দটি ঢুকিয়ে দেয়; যেগুলোর মাধ্যমে জাকির নায়েক প্রমান করার চেষ্টা করে যে বেদ এ মুহম্মদের কথা বলা আছে এবং মুহম্মদই কল্কি অবতার, সুতরাং জাকির এর মতে হিন্দুদের উচিত, হিন্দু ধর্ম ত্যাগ করে মুসলমান হয়ে যাওয়া। এছাড়াও অনেকে জানেন যে, ভবিষ্য পুরান লেখা হয়েছিলো সম্রাট আকবরের সময়ে এবং তাতেও ইসলামের এই সব বিষয় ঢুকানো আছে, যা দ্বারা জাকির হিন্দুদেরকে বিভ্রান্ত করছে, আর মূল বিষয় না জেনে হিন্দুরাও আমাদের ধর্মগুরুদের উদাসীনতায় বিভ্রান্ত হচ্ছে।
এই বিভ্রান্তি এড়াতে, হিন্দু ধর্মের মুল বিষয়গুলো জানতে হলে পড়তে হবে সংস্কৃত গ্রন্থগুলো এবং তাও যথেষ্ট সতর্ক হয়ে- কারণ, ইংরেজ আমলে প্রথম প্রিন্ট হওয়া সংস্কৃত গ্রন্থগুলো হানড্রেড পার্সেন্ট অবিকৃত নয়।
এভাবে মুসলিম আমলে অনুবাদিত এবং ইংরেজ আমলে ছাপা হওয়া গ্রন্থগুলোতে হিন্দু ধর্মের প্রধান দেব-দেবী ও দেব পুরুষদের চরিত্রকে সুকৌশলে বিকৃত করে কালিমালিপ্ত করা হয়েছে।এবার যাওয়া যাক, স্টার জলসায় প্রচারিত মহাভারত অনুসারে, রাধা-কৃষ্ণের প্রেমের যৌক্তিকতা প্রমানে। এতে, কৃষ্ণের বেড়ে উঠার স্থান, গোকুলের পাশের বৃন্দাবনে, কৃষ্ণের ৭ বছর বয়সের সময় রাধার সাথে তার দেখা হয় এবং কৃষ্ণের ১০ বছর ২ মাস বয়সের সময়, কৃষ্ণ, কংসকে হত্যা করার জন্য গোকূল-বৃন্দাবনের সকল মায়া ত্যাগ করে মথুরা চলে যায়। পরে কৃষ্ণ আর কোনোদিন বৃন্দাবনে যায় নি, আর রাধার সাথে তার দেখাও হয় নি। রাধা, কৃষ্ণের সমবয়সী হলেও ৭ থেকে ১০ বছরের মধ্যে দুজনের দেখা সাক্ষাৎ। এই বয়সে দুজনে বালক বালিকার মধ্যে প্রেম-যৌনতার অনুভূতি কাজ করবে, না খেলার অনুভূতি কাজ করবে ? ১০ বছর বয়সে কোনো মেয়ের ঋতুচক্রও শুরু হয় না, আর ইস্টোজেন হরমোনের প্রভাবে ঋতুচক্র শুরু না হলে কোনো মেয়ের মধ্যে প্রেমের অনুভুতি জাগতেই পারে না, যেমন টেস্টোস্টেরন হরমোনের প্রভাবে কেনো ছেলের শরীরে বীর্যের উৎপত্তি না হলে, তার মধ্যেও প্রেমের অনুভূতির সৃষ্টি হবে না। খুব এ্যাডভান্স হলেও একটি মেয়ের প্রেমে পড়তে বয়স হতে হবে কমপক্ষে ১৪/১৫ এবং ছেলের ১৭/১৮। রাধা কৃষ্ণের প্রেমের ক্ষেত্রে এই বাইলোজিক্যাল সাইন্সও কি মেলে ?এরপর উপরে আয়ান ঘোষ সম্বলিত স্বর্গমর্তের যে কাহিনী বলেছি, সেটা একবার স্মরণ করুন। বিষ্ণু যদি কৃষ্ণ হয়ে রাধাকে সঙ্গ দিতেই পৃথিবীতে আসে, তাহলে মাত্র ১০ বছর বয়সে কৃষ্ণ, রাধাকে ত্যাগ করে চলে গেলো কেনো ? পরে তার সাথে আর দেখা করতে এলো না কেনো ? বা কৃষ্ণ, রাধাকে বিয়েই বা করলো না কেনো ?
যে ঘটনা মিথ্যা, তার মধ্যে কোনো না কোনো ফাঁক থাকবেই। এই ফাঁকটা ধরতে পারলেই আপনি বুঝতে পারবেন, কৃষ্ণের প্রেমিকা হিসেবে পৃথিবীতে রাধা বলে আসলে কেউ কখনো ছিলো না। হিন্দুদের উপলব্ধির ভুলে আধ্যাত্মিক রাধা যখন রক্ত মাংসের রাধায় পরিণত হয়, তখন এই রাধা গিয়ে পড়ে মুসলিম শাসকদের যাঁতাকলে এবং তার সাথে সাথে পিষ্ট হয় কৃষ্ণও ।
এখানে আরো একটা বিষয় লক্ষ্যণীয়, সারা ভারতের মধ্যে বৃন্দাবনের পর রাধার প্রভাব সবচেয়ে বেশী বাঙ্গালিদের মধ্যে এবং তারপর উড়িয়া ও বিহারীদের মধ্যে। এর মূল কারণ মধ্যযুগের বড়ু চণ্ডীদাসের শ্রীকৃষ্ণকীর্তন যাত্রাপালা, এরপর বাংলায় চৈতন্যদেবের আবির্ভাব এবং তার প্রভাবে বৈষ্ণব পদাবলী । কিন্তু সারাভারত বাদ দিয়ে বাংলার বাইরে হিন্দি এলাকা হওয়া সত্ত্বেও মথুরা-বৃন্দাবনে রাধার ঐ বিস্ময়কর প্রভাব পড়লো কিভাবে ?প্রাচীন যুগে এক কৃষ্ণভক্ত মায়ের নির্দেশে কোনো এক রাজা মথুরা বৃন্দাবনে প্রথম কয়েকটি মন্দির নির্মান করে। আমার ধারণা, তখন সেই মন্দিরগুলোতে শুধু কৃষ্ণকেই পূজা করা হতো, যেহেতু মূল মহাভারতে রাধার কোনো উল্লেখ ছিলো না। এছাড়াও বৃন্দাবনে এমন কিছু প্রাচীন মন্দির আছে, যেগুলো কৃষ্ণকে নয়, হিন্দু ধর্মের অন্যান্য দেবতাদেরকে রিপ্রেজেন্ট করে। মুসলিম শাসনামলে বৃন্দাবনের প্রায় সকল মন্দিরই ধ্বংস করা হয় এবং সেগুলোকে তখন আর পুণনির্মান করতেও দেওয়া হয় নি। ইংরেজরা ভারতে আসার পর, হিন্দুদের ধর্মীয় মুক্তি ঘটলে সোমনাথ মন্দির সহ সকল ভগ্ন মন্দির পুননির্মান করা হয় এবং এর পর বেশ কিছু বাঙ্গালি- বিহারী উদ্যোক্তা, যারা চৈতন্যদেবের গভীর অনুরাগী, তারা বৃন্দাবনে মন্দির নির্মান করে এবং সেই মন্দিরগুলোতে কৃষ্ণের পাশে রাধাকে বসিয়ে, স্বামী-স্ত্রীর যুগল রূপকে সুড়সুড়ি দিয়ে, রাধা-কৃষ্ণের যুগল রূপের পূজা করতে শুরু করে, যাতে তীর্থ দর্শনে স্বামী-স্ত্রী এক সাথে যায় এবং তাদের মন্দিরের বিজনেসটা ভালো হয়। কিন্তু রাধা-কৃষ্ণ কি স্বামী স্ত্রী ছিলো ? এছাড়াও চৈতন্যদেব, রাধা কৃষ্ণের যুগল অবতার ব’লে যে একটা ধারণা তার ভক্তদের মধ্যে প্রচলিত আছে, বৃন্দাবনের মন্দিরগুলোতে কৃষ্ণের পাশে রাধার শক্ত অবস্থানের এটাও একটা কারণ।বৃন্দাবনের আশে পাশের গ্রামগুলোতে রাধার স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে অনেক লোককথা রয়েছে। এ থেকে ধারণা করা যায় যে, এমনও হতে পারে, রাধা নামের কোনো এক মহিলার জন্ম ঐ এলাকাতে কোনো এক সময় হয়েছিলো। দেবতা হিসেবেই কৃষ্ণের প্রতি ছিলো যার অগাধ প্রেম ও ভক্তি; যেমন নিকট অতীতে ছিলো মীরা বাই নামের এক মহিলার, যে কৃষ্ণ প্রেমে পাগল হয়ে বহু গান লিখে বিখ্যাত হয়ে গেছে, এমনকি সেই মহিলা অন্য কোনো পুরুষকে বিয়ে পর্যন্ত করে নি। এখন কি এই মীরাকেও কৃষ্ণের সাথে যুক্ত করে দুজনকে এক সাথে যৌন লীলায় ভাসাবো ? আবারও কি আমরা লিখবো নতুন কোনো পুরান ?
এমনও হতে পারে, রাধা নামের কোনো মেয়ে কৃষ্ণের সময়েই বৃন্দাবনে জন্মেছিলো। কৃষ্ণের সাথে সে খেলাধুলাও করেছিলো। কৃষ্ণের সময় তো অনেকেই বৃন্দাবন-গোকুলে জন্ম নিয়েছিলো, তাদের সবার নাম কি আর মূল মহাভারতে আছে ? উল্লেখযোগ্য না হওয়ায় অন্যান্যদের মতো হয়তো রাধার নামও চাপা পড়ে গেছে। কিন্তু কৃষ্ণ বৃন্দাবন ত্যাগ করার পর হয়তো বাল্যকালের খেলার স্মৃতি স্মরণ করে যৌবনে বয়সে কৃষ্ণের জন্য রাধার প্রেম জেগে উঠে, আর সেই কাহিনী ছড়িয়ে পড়ে চারেদিকে। এটা অসম্ভব কিছু নয়; কারণ, কৃষ্ণ ছিলো সেই সময়ের সুপার হিরো। একবার ভাবুন, যে ছেলে মাত্র ৫ বছর বয়সে কালীয় নাগের মতো একটা ভয়ংকর সাপকে তার অলৌকিক ক্ষমতা দ্বারা বশ করতে পারে, ১০ বছর বয়সে নিজের কণিষ্ঠা আঙ্গুলের উপর গোবর্ধন পর্বত তুলে ধরে রাখতে পারে, দেবরাজ ইন্দ্রকে যে পরাজিত করতে পারে, কংসের মতো শক্তিশালী রাজাকে যে কুস্তি লড়ে পরাজিত করে হত্যা ক’রে অলৌকিকভাবে নিজের পিতা-মাতাকে জল্লাদের হাত থেকে বাঁচাতে পারে, সে সব কথাকে মনে করে যেকোনো মেয়ের মধ্যে যে প্রেম জেগে উঠবে, তাতে আর আশ্চর্য কী ? কিন্তু রাধার এই এক তরফা প্রেমের সাথে কৃষ্ণের কি কোনো যোগাযোগ আছে ? আর কৃষ্ণের চরিত্রকে, সেই রাধার মাধ্যমে কলুষিত করারও কি কোনো সুযোগ আছে? একদমই নেই, যেহেতু রাধার সাথে কৃষ্ণের পরে আর দেখাই হয় নি।
আজও ঋত্বিকের মতো সুপারস্টারদের প্রেমে সারা বিশ্বের হাজার হাজার মেয়ে হাবুডুবু খায়। প্রেম, বিয়ে দূরে থাক, তাদের মধ্যে কেউ যদি তাকে একবার স্বচক্ষে দেখারও সুযোগ পায়, তাতেও সে নিজেকে ধন্য মনে করে বা করবে। আর সকল নীতি নৈতিকতাকে শিকোয় তুলে রেখে, ঋত্বিকের সাথে একটা রাত কাটাতে চায়, এমন মেয়েও আছে শত শত। ঋত্বিকের মতো সুপারস্টারদের প্রতি মেয়েদের এই যে প্রেম, ভালোবাসা; এটা কি ঋত্বিকের দোষ, নাকি অর্জন ? কৃষ্ণও ছিলো এরকমই, তার সময়ের সুপার হিরো। সুতরাং কৃষ্ণের প্রতি রাধা বা মীরার ওই রকম প্রেম থাকতেই পারে, তাতে তো কৃষ্ণের কিছু করার নেই। আর কৃষ্ণ সেরকম কিছু করেও নি।এসব বিষয় থেকে দুটো সিদ্ধান্তে আসা যায়, কৃষ্ণের বাল্যকালে রাধা বলে কোনো মেয়ে থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু কৃষ্ণের জীবনে সে উল্লেখযোগ্য কিছু ছিলো না। তাই মহাভারতে তার ব্যাপারে কোনো উল্লেখ নেই। এই সূত্রে রাধার বাল্যকালটা ঐতিহাসিক চরিত্র হতে পারে, কিন্তু তাতে কৃষ্ণ চরিত্র কলুষিত হয় না। কারণ, তার সাথে কৃষ্ণের পরবর্তীতে আর দেখা সাক্ষাৎ হয় নি। কিন্তু মধ্যযুগের আবিষ্কার যে যৌবনবতী রাধা, সেটা কিছুতেই ঐতিহাসিক চরিত্র হতে পারে না। এটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। কারণ, তা না হলে দ্বারকায় কৃষ্ণের রাজ্য পরিচালনা, মহাভারতের যুদ্ধ এবং কৃষ্ণের বিবাহিত জীবনে এই রাধার কোনো না কোনো ছাপ বা প্রভাব থাকতো। কিন্তু তা কি কোথাও আছে ?বৃন্দাবনের আশে পাশের গ্রামগুলোতে রাধার স্মৃতিচিহ্ন নিয়ে অনেক লোককথা রয়েছে। এ থেকে ধারণা করা যায় যে, এমনও হতে পারে, রাধা নামের কোনো এক মহিলার জন্ম ঐ এলাকাতে কোনো এক সময় হয়েছিলো। দেবতা হিসেবেই কৃষ্ণের প্রতি ছিলো যার অগাধ প্রেম ও ভক্তি; যেমন নিকট অতীতে ছিলো মীরা বাই নামের এক মহিলার, যে কৃষ্ণ প্রেমে পাগল হয়ে বহু গান লিখে বিখ্যাত হয়ে গেছে, এমনকি সেই মহিলা অন্য কোনো পুরুষকে বিয়ে পর্যন্ত করে নি। এখন কি এই মীরাকেও কৃষ্ণের সাথে যুক্ত করে দুজনকে এক সাথে যৌন লীলায় ভাসাবো ? আবারও কি আমরা লিখবো নতুন কোনো পুরান ?
এমনও হতে পারে, রাধা নামের কোনো মেয়ে কৃষ্ণের সময়েই বৃন্দাবনে জন্মেছিলো। কৃষ্ণের সাথে সে খেলাধুলাও করেছিলো। কৃষ্ণের সময় তো অনেকেই বৃন্দাবন-গোকুলে জন্ম নিয়েছিলো, তাদের সবার নাম কি আর মূল মহাভারতে আছে ? উল্লেখযোগ্য না হওয়ায় অন্যান্যদের মতো হয়তো রাধার নামও চাপা পড়ে গেছে। কিন্তু কৃষ্ণ বৃন্দাবন ত্যাগ করার পর হয়তো বাল্যকালের খেলার স্মৃতি স্মরণ করে যৌবনে বয়সে কৃষ্ণের জন্য রাধার প্রেম জেগে উঠে, আর সেই কাহিনী ছড়িয়ে পড়ে চারেদিকে। এটা অসম্ভব কিছু নয়; কারণ, কৃষ্ণ ছিলো সেই সময়ের সুপার হিরো। একবার ভাবুন, যে ছেলে মাত্র ৫ বছর বয়সে কালীয় নাগের মতো একটা ভয়ংকর সাপকে তার অলৌকিক ক্ষমতা দ্বারা বশ করতে পারে, ১০ বছর বয়সে নিজের কণিষ্ঠা আঙ্গুলের উপর গোবর্ধন পর্বত তুলে ধরে রাখতে পারে, দেবরাজ ইন্দ্রকে যে পরাজিত করতে পারে, কংসের মতো শক্তিশালী রাজাকে যে কুস্তি লড়ে পরাজিত করে হত্যা ক’রে অলৌকিকভাবে নিজের পিতা-মাতাকে জল্লাদের হাত থেকে বাঁচাতে পারে, সে সব কথাকে মনে করে যেকোনো মেয়ের মধ্যে যে প্রেম জেগে উঠবে, তাতে আর আশ্চর্য কী ? কিন্তু রাধার এই এক তরফা প্রেমের সাথে কৃষ্ণের কি কোনো যোগাযোগ আছে ? আর কৃষ্ণের চরিত্রকে, সেই রাধার মাধ্যমে কলুষিত করারও কি কোনো সুযোগ আছে? একদমই নেই, যেহেতু রাধার সাথে কৃষ্ণের পরে আর দেখাই হয় নি।
আজও ঋত্বিকের মতো সুপারস্টারদের প্রেমে সারা বিশ্বের হাজার হাজার মেয়ে হাবুডুবু খায়। প্রেম, বিয়ে দূরে থাক, তাদের মধ্যে কেউ যদি তাকে একবার স্বচক্ষে দেখারও সুযোগ পায়, তাতেও সে নিজেকে ধন্য মনে করে বা করবে। আর সকল নীতি নৈতিকতাকে শিকোয় তুলে রেখে, ঋত্বিকের সাথে একটা রাত কাটাতে চায়, এমন মেয়েও আছে শত শত। ঋত্বিকের মতো সুপারস্টারদের প্রতি মেয়েদের এই যে প্রেম, ভালোবাসা; এটা কি ঋত্বিকের দোষ, নাকি অর্জন ? কৃষ্ণও ছিলো এরকমই, তার সময়ের সুপার হিরো। সুতরাং কৃষ্ণের প্রতি রাধা বা মীরার ওই রকম প্রেম থাকতেই পারে, তাতে তো কৃষ্ণের কিছু করার নেই। আর কৃষ্ণ সেরকম কিছু করেও নি।এসব বিষয় থেকে দুটো সিদ্ধান্তে আসা যায়, কৃষ্ণের বাল্যকালে রাধা বলে কোনো মেয়ে থাকলেও থাকতে পারে, কিন্তু কৃষ্ণের জীবনে সে উল্লেখযোগ্য কিছু ছিলো না। তাই মহাভারতে তার ব্যাপারে কোনো উল্লেখ নেই। এই সূত্রে রাধার বাল্যকালটা ঐতিহাসিক চরিত্র হতে পারে, কিন্তু তাতে কৃষ্ণ চরিত্র কলুষিত হয় না। কারণ, তার সাথে কৃষ্ণের পরবর্তীতে আর দেখা সাক্ষাৎ হয় নি। কিন্তু মধ্যযুগের আবিষ্কার যে যৌবনবতী রাধা, সেটা কিছুতেই ঐতিহাসিক চরিত্র হতে পারে না। এটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক। কারণ, তা না হলে দ্বারকায় কৃষ্ণের রাজ্য পরিচালনা, মহাভারতের যুদ্ধ এবং কৃষ্ণের বিবাহিত জীবনে এই রাধার কোনো না কোনো ছাপ বা প্রভাব থাকতো। কিন্তু তা কি কোথাও আছে ?
কৃষ্ণ কোনো দিন কারো সাথে অন্যায় করে নি এবং কাউকে কোনো দিন কোনো প্রকারে দুঃখ দেয় নি। খেয়াল করুন, মহাভারতের যুদ্ধের আগে, কৃষ্ণ, যাতে যুদ্ধ না হয়, সেজন্য সন্ধির প্রস্তাব নিয়ে হস্তিনাপুর রাজসভায় যায় এবং তখন তাকে দুর্যোধন বন্দি করার চেষ্টা করে। নিরপেক্ষতার স্বার্থে, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে সেই দুর্যোধনকেও কৃষ্ণ তার নারায়নী সেনা দিয়ে দিয়েছিলো এবং নিজে অস্ত্রহীন হয়ে পাণ্ডবদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ পরিচালনা করেছিলো। একবার আঙ্গুল কেটে গেলে, দ্রৌপদী, তার শাড়ির আঁচল ছিঁড়ে কৃষ্ণের আঙ্গুলে বেঁধে দিয়েছিলো, তার বিনিময়ে কৃষ্ণ হস্তিনাপুরের রাজসভায় দ্রৌপদীর বস্ত্রহরণের চেষ্টার সময়, সেখানে উপস্থিত না থেকেও শত শত হাত শাড়ির মাধ্যমে দ্রৌপদীর সম্মান রক্ষা করেছিলো। শুধু তাই নয়, পাণ্ডবদের দ্বিতীয় বনবাসের সময়, ভাতের হাঁড়িতে পড়ে থাকা শুধু মাত্র একটি ভাত খেয়ে কৃষ্ণ অলৌকিকভাবে, খেতে বসা উপস্থিত সকল সাধু-সন্ন্যাসীদের পেট ভরিয়ে তাদেরকে সন্তুষ্ট চিত্তে বিদায় করতে দ্রৌপদী ও যুধিষ্ঠিরকে সাহায্য করেছিলো।
শ্রদ্ধা ভক্তি নিয়ে স্মরণ করলে যে কৃষ্ণ, তার ভক্তের প্রতি এমনভাবে সাড়া দেয়, সেই কৃষ্ণকে, চৈতন্যদেব প্রভাবিত বৈষ্ণব পদাবলীর রাধা, এত ডেকেও কেনো তার সাড়া পায় না ? এখানে বলে রাখি, বৈষ্ণব পদাবলীতে রাধার সাথে কৃষ্ণের কোনো মিলন নেই, এখানে রাধার শুধুই বিরহ আর কৃষ্ণকে পাওয়ার ব্যাকুলতা।
এসববিষয় বিবেচনা করলে, এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমানিত হয় যে, কৃষ্ণের সাথে যৌবনবতী রাধা, কবিদের উপলব্ধির ভুল আর শুধুই কষ্ট কল্পনা। বাস্তবে বৃন্দাবনে কৃষ্ণের বাল্যকালে কোনো রাধা থেকে থাকলেও, তার সাথে যুবক কৃষ্ণের কোনো সম্পর্ক নেই এবং এজন্যই রাধা কৃষ্ণের প্রেম, কোনো প্রকারেই ঐতিহাসিক নয়, সম্পূর্ণ কাল্পনিক।
তথ্যসুত্র :- https://mobile.facebook.com/groups/109388095770088?view=permalink&id=1663418070367075&refid=18&ref=opera_speed_dial&_ft_=qid.6452295417532433337%3Amf_story_key.1663418070367075%3Atop_level_post_id.1663418070367075%3Atl_objid.1663418070367075&__tn__=%2As-R
হিরণ্যকশিপু মিথ্যাচার (ভাগবতপুরাণ)
ভাগবতঃ বাকি থাকল হিরণ্যকশ্যপ। তার পুত্র প্রহ্লাদ।সে এক ভগবদ ভক্ত বালক। তাকে তার বাবা বলল-যদি তোর ইষ্টদেব রাম সত্য হয় তা হলে এই উত্তপ্ত স্তম্ভ ধরিলেও জ্বলিবে না। তখন সে তা ধরতে উদ্যত হল। এসময় তার মনে সংশয় দেখা দিল, দগ্ধ না হয়ে সে রক্ষা পাবে কিনা। তখন নারায়ন সে স্তম্ভের উপর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পিপীলিকার শ্রেণী চালিত করল। প্রহ্লাদ নিশ্চিত হয়ে স্তম্ভ ধরিল। স্তম্ভ বিদীর্ণ হল।স্তম্ভের ভিতর থেকে নৃসিংহ আবির্ভূত হয়ে তার বাবার উদর বিদীর্ণ করিতে লাগলেন। পরে পহ্লদকে ২১ পুরুষ সদগতি লাভ করার বর দিলেন ।
.
প্রশ্ন- প্রজ্বলিত স্তম্ভে পিপীলিকা কি করে বিচরণ করেছিল? প্রহ্লাদও দগ্ধ হলো না কেন? যে সকল লোক এ কথা বিশ্বাস করে ও মানে তাকে উত্তপ্ত স্তম্ভ স্পর্শ করানো উচিত। যদি সে দগ্ধ না হয় তবে মানতে হবে যে প্রহ্লাদ দগ্ধ হয় নাই। পূর্বে সনকাদিকে বর দেওয়া হয়েছিল যে, ৩য় জম্মের পর সে বৈকুন্ঠে আসিবে। নারায়ন কি তা ভুলে গেল ?
ভাগবতের মতে ব্রহ্ম প্রজাপতি কশ্যপ হিরণ্যক্ষ ও হিরণ্যকশ্যপপুরুষের অন্তরগত। প্রহ্লাদের ২১ পুরুষ হয় নাই অথচ ২১ পুরুষের সদগতি করার কথা বলা কত বড় ভুল ! আবার সেই হিরণ্যক্ষ ও হিরণ্যকশ্যপ, রাবণ ও কুম্ভকর্ণ এবং পরে শিশুপাল ও দন্তবক্র রূপে জম্মগ্রহণ করল। তাহলে নৃসিংহের বর কোথায় উড়ে গেল ? প্রমাদগ্রস্ত লোকেরাই প্রমাদপূর্ণ কথা বলে শোনে এবং বিশ্বাস করে। যারা বিদ্বান তারা কখনো সেরূপ করে না
★বেদোক্ত কর্ম পর্ব সংগঠন★
❏ কর্ম এক হোক —
সংগচ্ছধবং সংবদদ্ধং সংবো মানাংসি জানতাম্।
দেবাভাগং যথাপূর্ব্বে সংজানানা উপাসতে।।
➢ ঋগ্বেদ. ১০/১৯১/২|
বঙ্গানুবাদঃ- হে মনুষ্য! তোমরা একসঙ্গে চল, একসঙ্গে মিলিয়া আলোচনা কর, তোমাদের মন উত্তম সংস্কার যুক্ত হউক। পূর্ব্বকালীন জ্ঞানী পুরুষেরা যেরূপ কর্ত্তব্য কর্ম্ম সম্পাদন করিয়াছেন তোমরাও সেইরূপ কর।।
❏ চিত্ত এক হোক—
সমানো মন্ত্রঃ সমিতিঃ সমানী সমানসংখ্যক মন সহচিত্তমেষাম্।
সমানসংখ্যক মন্ত্রমভি মন্ত্রয়ে বঃ সমানেন বো হবিষা জুহোমি।।
➢ ঋগ্বেদ.১০/১৯১/৩|
বঙ্গানুবাদঃ- তোমাদের সকলের মত এক হউক, মিলন ভূমি এক হউক, মন এক হউক, সকলের চিত্ত সম্মিলিত হউক, তোমাদের সকলকে একই মন্ত্রে সংযুক্ত করিয়াছি, তোমাদের সকলের জন্য অন্ন ও উপভোগ একই প্রকারে দিয়াছি।।
❏ লক্ষ্য এক হোক —
সমানী ব আকুতি সমানা হৃদয়ানি বঃ।
সমানমস্তুু বো মনো যথা বঃ সু সহাসতি।।
➢ ঋগ্বেদ. ১০/১৯১/৪|
বঙ্গানুবাদঃ- তোমাদের সকলের লক্ষ্য সমান হউক, তোমাদের হৃদয় সমান হউক, তোমাদের মন সমান হউক। এইভাবে তোমরা সকলের শক্তি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হউক।
❏ মিত্র দৃষ্টি —
দৃতে দৃংহ মা মিত্রস্য মা চক্ষুষা সর্ব্বাণি ভূতানি সমীক্ষন্তাম্।
মিত্রস্যাহং চক্ষুষা সর্ব্বাণি ভূতানি সমীক্ষে।
মিত্রস্য চক্ষুষা সমীক্ষামহে।।
➢ যজুর্বেদ. ৬৬/১৮ |
বঙ্গানুবাদঃ- হে দুঃখনাশক পরমেত্মন্ ! আমাকে সুখের সহিত বর্দ্ধন কর। সব প্রাণী আমাকে মিত্রের দৃষ্টিতে দেখুক। আমি সর্ব্ব প্রাণীকে মিত্রের দৃষ্টিতে দেখি। আমরা একে অন্যকে মিত্রের দৃষ্টিতে দেখি।
❏ মিলন —
সংবঃ পৃচ্যন্তাং তম্বঃ সংমনাংসি সমুব্রতা।
সং বোহয়ং ব্রহ্মণস্পতির্ভগঃ সংবো অজিগমৎ।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৬/৭৪/১ |
বঙ্গানুবাদঃ- তোমাদের শরীর মন এবং কর্ম্ম একসঙ্গে মিলিয়া থাকুক। হে জ্ঞানের রক্ষক। ঐশ্বর্যময় প্রভো! সকলকে মিলাইয়া রাখ।
❏ সন্তোষ —
সংজ্ঞপনং বো মনসোহথ সংজ্ঞপনং হৃদঃ।
অথচো ভগস্য যচ্ছান্তং তেন সংজ্ঞপয়ামি বঃ।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৬/৭৪/২|
বঙ্গানুবাদঃ- তোমাদের মনের উত্তম জ্ঞান, হৃদয়ের সন্তোষ ভাব এবং ভাগ্যের শ্রান্তি এই সব দ্বারা তোমাদের সন্তোষ বিধান করিতেছি।
❏ ব্রাহ্মণ -ক্ষত্রিয় —
যত্র ব্রহ্মচ ক্ষত্রংচ সম্যঞ্চৌ চরতঃ সহ।
তংলোকং পূণ্যং প্রজ্ঞেয়ং যত্রদেবাঃ সহাগ্নিনা।।
➢ যজুর্বেদ. ২০/২৫ |
বঙ্গানুবাদঃ- যেখানে জ্ঞানীরা এবং বীর পুরুষেরা একসঙ্গে বাস করেন, যেখানে বিদ্বানেরা তেজের সঙ্গে থাকেন সাই দেশকে পূণ্য ও জ্ঞানময় জানিবে।
❏ সকলে ভাই ভাই —
অজ্যেষ্ঠাসো অকনিষ্ঠাসঃ এতে সং ভ্রাতরো তাবৃধুঃ সৌভগায়।
যুব পিতা স্বপা রুদ্র এসাং সুদুঘা পুশ্নিঃ সুদিনা মরুদ্ভঃ।।
➢ ঋগ্বেদ. ৫/৬০/৫ |
বঙ্গানুবাদঃ- মনুষ্যের মধ্যে কেহ বড় নয় বা কেহ ছোট নয়। ইহারা ভাই ভাই। সৌভাগ্য লাভের জন্য ইহারা প্রযত্ন করে। ইহাদের পিতা তরুণ শুভকর্ম্ম ঈশ্বর এবং মাতা দুগ্ধবতী প্রকৃতি। প্রকৃতি মাতা ক্রন্দনহীন পুরুষার্থী সন্তানকেই সুদিন প্রদান করে।
❏ জন্মভূমি —
তে অজ্যেষ্ঠা অকনিষ্ঠাস উদ্ভিদো হমধ্যমাসেঃ মহসা বি বাবৃধুঃ।
সুজাতাসো জনুষঃ পৃশ্নি মাতরা দিবো মর্যা আ নো অচ্ছা জিগতন।।
➢ ঋগ্বেদ. ৫/৫৯/৬|
বঙ্গানুবাদঃ- মনুষ্যের মধ্যে কেহ বড় নয় কেহ ছোট নয় এবং কেহ মধ্যম নয় তাঁহারা সকলেই উন্নতি লাভ করিতেছে। উৎসাহের সঙ্গে বিশেষ ভাবে ক্রমোন্নতির প্রযত্ন করিতেছে। জন্ম হইতেই তাঁহারা কুলীন। তাঁহারা জন্মভূমির সন্তান দিব্য মনুষ্য। তাঁহারা আমার নিকট সত্য পথে আগমন করুক।
❏ অস্পৃশ্যতা বর্জন —
সহৃদ্বয়ং সাংমনস্যমবিদ্বেষং কৃণোমি বঃ।
অন্যো অন্যমভি হর্যত বৎসং জাতমিবাঘ্ন্যা।।
➢ অউর্ব্ববেদ. ৩/৩০/১ |
বঙ্গানুবাদঃ- আমি তোমাদের জন্য সহৃদয়তা, উত্তম মন, নির্বৈরতা প্রদান করিয়াছি। তোমরা একে অন্যের প্রতি গাভী যেমন নবজাত বৎসের মলিন শরীরকে সর্ব্বশ্রেষ্ঠ অঙ্গ জিহ্বা দ্বারা পরিষ্কার করে সেইরূপ প্রেম কর।
❏ পিতা -পুত্র —
অনুব্রত পিতুঃ পুত্রশোক মাত্রা ভবতু সংমনাঃ।
জায়াপত্যে মধমতীং বাচং বদতু শংতিবাম্।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৩/৩০/২|
বঙ্গানুবাদঃ- পুত্র পিতার অনুকুলে কার্য করিবে, মাতার সহিত সৎ ভাবে থাকিবে। পত্নী পতির সহিত শান্ত ও মধুর বচন বলিবে।
❏ ভ্রাতা ভাগ্নী —
মা ভ্রাতা ভ্রাতারং দ্বিক্ষম্মা স্বসারমুতস্বসা।
সম্যঞ্চঃ সব্রতা ভূত্বা বাচং বদত ভদ্রয়া।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৩/৩০/৩|
বঙ্গানুবাদঃ- ভ্রাতা ভ্রাতাকে দ্বেষ করিবে না। ভাগ্নী ভগ্নীকে দ্বেষ করিবে না। তোমরা সকলে সম মতাবলম্বী ও সম কর্ম্মাবলম্বী হইয়া সৎ ভাবে বার্ত্তালাপ কর।
❏ অবিরোধ —
যেন দেবা ন বিযংতি নোচ বিদ্বিষতে মিথঃ।
তৎকৃন্মো ব্রহ্ম বো গৃহে সংজ্ঞানাং পুরুষেভ্যঃ।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৩/৩০/৪|
বঙ্গানুবাদঃ- যাহাতে জ্ঞানীদের মধ্যে বিরোধ না হয়, পরস্পরের মধ্যে বিদ্বেষ না জন্মে সেই উত্তম জ্ঞান তোমাদের গৃহে মনুষ্যের মধ্যে দান করিয়াছি।
❏ সম্বন্ধ —
জ্যায়স্বন্তশ্চিত্তিনো মা বি যৌষ্ট সংরাধয়ন্ত সধুরাশ্চরন্ত।
অন্যো অন্যস্মৈ বল্পুবদন্ত এত সব্রীচী সাম্বঃ সংমনসস্কৃণোমি।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৩/৩০/৫ |
বঙ্গানুবাদঃ- তোমরা জ্যেষ্ঠর সন্মান করিও। তোমরা বিচারশীল সাধক্ একই বন্ধনের নীচে আবদ্ধ হইয়া চলিতেছ। তোমরা পৃথক হইও না। একে অন্যের সঙ্গে মনোহর কথাবার্ত্তায় অগ্রসর হও।
❏ পানাহার —
সমানী প্রপা সহ বোরন্নভাগঃ সমানে যোক্তো সহ বো যুনজোমি।
সমঞ্চোহগ্নিং য়পর্যতারা নাভি মিবাভিতঃ।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৩/৩০/৬|
বঙ্গানুবাদঃ- তোমাদের পান এক সঙ্গে, ভোজনও এক সঙ্গে হউক। তোমাদিগকে এক সঙ্গে একই প্রেমবন্ধনে যুক্ত করিয়াছি। সকলে মিলিয়া পরমাত্মাকে পূজা কর। রথচক্রের কেন্দ্রের চারিদিকে যেমন অর থাকে তোমরা সেই ভাবে থাক।
❏ অতি ভোজন —
সঘ্রীচীনাম্বঃ সংমনসস্কৃণোম্যেকশষ্টীস্তুসংবননেন সর্বান্।
দেবা ইবাহ মৃতং রক্ষমাণাঃ সায়ংপ্রাতঃ সৌমনসো বো অস্ত।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৩/৩০/৭|
বঙ্গানুবাদঃ তোমরা সৎভাবে একই পথে অগ্রসর হও, চিত্ত তোমাদের উন্নত হউক, পানাহার তোমাদের এক সঙ্গে হউক -আমি তোমাদের জন্য এইরূপ ব্যবস্থাই করিয়াছি। অমৃত রসে আপ্লুত বিদ্বানদের ন্যায় প্রাতে ও সায়ংকালে তোমাদের চিত্ত প্রসন্ন হউক।
● ও৩ম্ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃশ্ ।।।
● সংগ্রহঃ পন্ডিত দিনবন্ধু বেদশাস্ত্রীর (কোলকাতা আর্য সমাজ) বেদ ভাষ্য থেকে সংগৃহিত।
● ডক্ সম্পাদনাঃ আর্য বিশ্বজিৎ রায়।
❖ রাখি পূর্ণিমা ১ লা ভাদ্র ১৪২৩ বাংলা। 18/08/2016 খৃষ্টাব্দ
গায়ত্রী মন্ত্রের ব্যাখ্যা ও বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য।
গায়ত্রী মন্ত্র হল বৈদিক
হিন্দুধর্মের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্র। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে,বেদের অন্যান্য মন্ত্রের মতো গায়ত্রী মন্ত্রও “অপৌরষেয়” (অর্থাৎ,কোনো মানুষের দ্বারা রচিত নয়) এবং এক ব্রহ্মর্ষির কাছে (গায়ত্রী মন্ত্রের ক্ষেত্রে ব্রহ্মর্ষি বিশ্বামিত্র ) প্রকাশিত। এই মন্ত্রটি
বৈদিক সংস্কৃত ভাষায় রচিত। এটি ঋগ্বেদের মণ্ডলের (৩।৬২।১০) একটি
সূক্ত । গায়ত্রী মন্ত্র গায়ত্রী ছন্দে রচিত। ওঁ ভূর্ভুবঃ স্বঃ
তৎ সবিতুর্বরেণ্যং ভর্গো দেবস্য ধীমহি। ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ।। [ ঋগবেদ ৩.৬২.১০,যজুর্বেদ ৩.৩৫,৩০.২,সামবেদ উত্তরার্চ্চিক ৬.৩.১০] পদচ্ছেদ: ওঁ-পরমাত্মা, ভূঃ-প্রাণস্বরুপ, ভূবঃ-দুঃখনাশক, স্বঃ-সুখস্বরুপ, তত্-সেই, সবিতু-সমগ্র জগতের সৃষ্টিকর্তা, বরেণ্যম-বরণযোগ্য সর্বোত্তম, ভর্গো-পাপ নাশক, দেবস্য-সমগ্র ঐশ্বর্য দাতা, ধীমহি-ধারণ করি, ধিয়ঃ-প্রজ্ঞাসমূহকে, য়ঃ-যিনি, নঃ-আমাদের , প্রচোদয়াত্-সত্য জ্ঞান প্রদান করুক। অনুবাদ-পরমাত্মা প্রাণস্বরুপ, দুঃখনাশক ও সুখস্বরুপ। সেই জগতসৃষ্টিকারী ও ঐশ্বর্যপ্রদাতা পরমাত্মার বরণযোগ্য পাপ-বিনাশক তেজকে আমরা ধারণ করি। তিনি আমাদের বুদ্ধিকে শুভ গুণ, কর্ম ও স্বভাবের দিকে চালনা করুক। গায়ত্রী মন্ত্রের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণঃ (ওঁ ভূর্ভুবঃ স্বঃ )
ভূঃ-পৃথিবী, ভুবঃ-সূর্য, স্বঃ- ছায়াপথ বা আকাশগঙ্গা এই টার্মগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। যখন একটি ফ্যান ৯০০ আরপিএম গতিতে ঘুরে, এটি বাতাসের মধ্য দিয়ে একটি শব্দ উৎপন্ন করে। একইভাবে যখন অসীম গ্রহমণ্ডলী,সৌর সিস্টেম,ছায়াপথ প্রতি সেকেন্ডে ২০,০০০ বার গতিতে ঘুরে,তারা একটি শব্দ উৎপন্ন করে। ঋষি বিশ্বামিত্র ধ্যানের মাধ্যমে এই শব্দ শুনতে চেষ্টা করেন এবং ঘোষণা করেন যে,এই শব্দ ঐশ্বরিক ওম। ঐ প্রজন্মের ঋষিরা সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, এই ওম এই সৃষ্টিতে সবসময় উৎপাদিত হয় এবং বিদ্যমান থাকে এবং নাকি ঈশ্বরের একটি উপায় তার সৃষ্টির সাথে যোগাযোগ করার। এমনকি গীতায়,শ্রীকৃষ্ণ ঘোষণা করেন যে,ঈশ্বরকে ওম ইতি একক্ষরম ব্রহ্ম হিসেবে, এটি দ্বারা বুঝায় যে ওম ছাড়া ঈশ্বরকে পূজা করার মত আর কোন আকৃতি নেই। যোগী এই শব্দকে “উদগীত নাদ” হিসেবে বলেন যা ধ্যানের সময় সমাধিতে পৌঁছানোর জন্য জপ করা হয় । এটা অন্য সব বৈদিক মন্ত্রের শুরুতে সংযোজন করা হয়। (তৎ সবিতুর্বরেণ্যং) তৎ-স্রষ্টা, সবিতুর-সূর্য নামক একটি গ্রহ যা সংস্কৃত অর্থ মতে সূর্যের সমার্থক, বরেণ্যম-তার সামনে নত হওয়া। এর মানে হল যে,আমরা স্রষ্টার সামনে নত হচ্ছি যার শব্দ ওম এবং যাকে অসীম গ্রহমণ্ডলী থেকে আগত আলোর মত দেখায়। (ভর্গো দেবস্য ধীমহি) ভর্গো-আলো, দেবস্য-দেবতা, ধীমহি-তাকে উপাসনা করা । যা অর্থ আ্মাদের আলো রুপে ঈশ্বরের উপাসনা করার প্রয়োজন।(ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ) ধিয়ো-জ্ঞান, য়ো-কেবা, নঃ-আমাদেরকে,প্রচোদয়াৎ- যথাযথ মাধ্যম / পথে । যার মানে যিনি আমাদের জ্ঞান দান করে থাকেন বা আমাদের জ্ঞান লাভ করতে সঠিক দেখান,সেই ঈশ্বর। এভাবে ঘুরন্ত অসীম ছায়াপথ থেকে নির্গত শক্তি এই সৃষ্টির সবদিকে ছড়িয়ে আছে বলে তাঁকে প্রনব বলা হয়। এই অনুরূপ K.E. = 1/2 mv2 । বেদের অনেক মন্ত্রের আগে তাই এই শক্তিশালী ওম যুক্ত করা হয়েছে এবং বিশ্বের এমনকি অনেক রিলিজিওনেও এই শব্দ সামান্য পরিবর্তন করে যোগ করেছেন এবং তাদের প্রার্থনায়ও যুক্ত করেছেন। প্রস্তুত করেছেন শ্রী প্রসেনজিত।
ভাগবদ্ পুরাণ সমীক্ষা
শ্রীমদ্ভাগবত_পুরাণ এটা কবে রচিত? এটা কি
কৃষ্ণদৈপরায়ণ ব্যাসদেব রচনা করেছেন? এর
স্কন্ধ, অধ্যায় ও শ্লোক সংখ্য কত? # উত্তর – বেশীর ভাগ পৌরাণিক দাদারাই বলবে
এটা কৃষ্ণদৈপরায়ন ব্যাসদেব রচনা করেছেন
মহাভারতের যুগে এবং এতে শ্লোক সংখ্যা ১৮হাজার। প্রমাণ হিসেবে তারা ঐ গ্রন্থের একটি
শ্লোক দেখিয়ে প্রমাণের চেষ্টা করবে। শ্লোকটা
একটু দেখেনি-
“অষ্টাদশ শ্রী ভাগবত মিষ্যতে” # শ্রীমদ্ভাগবত ১২।১৩।৯. অর্থাৎ ভাগবতে মোট ১৮০০০ শ্লোক আছে। প্রিয় শুধি,
এবার আমার কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ুন, আশা
করি অনেক নতুন তথ্য পাবেন। ১. এই গ্রন্থটা মহাভারতের যুগের রচনাকৃত নয়।
আর এর প্রমাণ ভাগবতেই আছে। দেখুন- “আশ্রমাঃ ঘরনৈরুদ্বস্তীর্ থানি সরিস্তথা। দেবতা য়তনান্যত্র দুষ্টর্নষ্টানি ভূরিশঃ” # ভাগবতমাহাত্ম প্রকরণ ১।৩৪. অর্থাৎ নারদ বলছেন যে কলিযুগে যবনরা (মুসলিম)
ভারতের নদী, তীর্থ ও আশ্রমের উপর অধিকার
করে নিয়েছে এবং দেবমন্দিরকে নষ্ট করে দিয়েছে।
এখন প্রশ্ন হল মহাভারতের যুগে কি যবন বা
মুসলিম ছিল??? না ছিল না, এর থেকেই পরিষ্কার
যে ভাগবত মুসলিম আক্রমণের পরেই রচিত হয়েছে
এবং কৃষ্ণদৈপরায়ণ ব্যাসদেব এটা রচনা করেনি।
২. এর শ্লোক সংখ্যা কখনোই ১৮০০০ নয়, কেননা গণনা করলে এতে মাহাত্মসহ মোট ১৪৭৬৪টা শ্লোক (প্রায়) পাওয়া যায়। মানে এই
গ্রন্থে ভেজাল আছে এটা ১০০ ভাগ নিশ্চত।
এখন বলতে পারে যে আমার কথাটা যে ঠিক তার
প্রমাণ কি??? কথাটা অযোক্তিক নয়, তাই আপনাদের জন্য প্রমাণ উপস্থাপন করলাম। যারা
যাচাই করতে চান তারা রামকৃষ্ণ মিশন থেকে
গীতাপ্রেস এর শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ কিনে যাচাই
করে নিবেন-
মোট স্কন্ধ ১২টা।
মোট অধ্যায় ৩৩৫টা, মাহাত্মসহ মোট অধ্যায় ৩৪৫টা। মোট শ্লোক সংখ্যা ১৪০৬১টা, মাহাত্মসহ মোট শ্লোক ১৪৭৬৪টা প্রায়। অনেকে প্রশ্ন করতে পারেন কোন স্কন্ধে কতটা
অধ্যায় ও শ্লোক আছে ??? তাই সেটাও দিলাম
আপনাদের জানার জন্য-
১ম স্কন্ধে ১৯টি অধ্যায় ও ৮০৯টা শ্লোক আছে।
২য় স্কন্ধে ১০টি অধ্যায় ও ৩৯১টা শ্লোক আছে।
৩য় স্কন্ধে ৩৩টি অধ্যায় ও ১৩১৭টা শ্লোক আছে।
৪র্থ স্কন্ধে ৩১টি অধ্যায় ও ১৪৪৫টা শ্লোক
আছে।
৫ম স্কন্ধে ২৬টি অধ্যায় ও ৬৬৮টা শ্লোক আছে।
৬ষ্ঠ স্কন্ধে ১৯টি অধ্যায় ও ৮৫১টা শ্লোক আছে।
৭ম স্কন্ধে ১৫টি অধ্যায় ও ৭৫০টা শ্লোক আছে।
৮ম স্কন্ধে ২৪টি অধ্যায় ও ৯৩১টা শ্লোক আছে।
৯ম স্কন্ধে ২৪টি অধ্যায় ও ৯৬৪টা শ্লোক আছে।
১০ম স্কন্ধে ৯০টি অধ্যায় ও ৩৯৪৮টা শ্লোক
আছে।
১১দশ স্কন্ধে ৩১টি অধ্যায় ও ১৩৬৭টা শ্লোক আছে।
১২দশ স্কন্ধে ১৩টি অধ্যায় ও ৫৬৬টা শ্লোক
আছে।
মানে মাহাত্ম বাদে অধ্যায় প্রায় ৩৩৫টা ও
শ্লোক প্রায় ১৪০৬১টা। শুরুতে মাহাত্ম্যমে অধ্যায় আছে ৬টি ও শ্লোক
আছে প্রায় ৫০৪টা।
শেষে মাহাত্ম্যমে অধ্যায় আছে ৪টি ও শ্লোক
আছে প্রায় ১৯৯টা।
মানে মাহাত্ম্যমসহ অধ্যায় প্রায় ৩৪৫টা ও
মাহাত্ম্যমসহ শ্লোক আছে প্রায় ১৪৭৬৪টা।
বিঃদ্রঃ এই পোষ্টটির জন্য আর্য সমাজ, আর্য
বীর ও অগ্নিবীররা কোন দায়ী থাকবে না। এটা
একান্তই Rajon Arya এর ব্যক্তিগত একটা গবেষণা। এখানে প্রায় লেখার কারণ হল মনের ভুলে
গণনায় সংখ্যাটা হালকা এদিক সেদিক হতে পারে।
তবে হবে না যে এটা ৯৯ ভাগ নিশ্চিত। তারপরও
আপনাদের যাচাই করার অনুরোধ রইল। নমস্তে।
নমস্কার কি?
একজন বৈদিক তথা সনাতন হিন্দু
ধর্মালম্বী ব্যক্তির অন্যতম
একটি বৈশিষ্ঠ্য হল
কারো সাথে দেখা হলে কড়জোড়ে
তাকে নমস্কার প্রদান করে অভিবাদন
বা সম্মান জানানো।
কিন্তু হিন্দুসমাজ মানেই হল
ধর্মগ্রন্থকে বুড়ো আঙ্গুল
দেখিয়ে নিজে নিজে নতুন নিয়ম
বানানো,ঐক্য আমাদের পছন্দ
নয়,অযাচিত বিভেদেই আমাদের
আসক্তি।আর এই সুত্র ধরেই
অনেকে বিশেষত নির্দিষ্ট কিছু
সংগঠনের সদস্যরা সার্বজনীন
এবং পবিত্র বেদাদি কর্তৃক
অনুমোদিত,সকল প্রাচীন ঋষি-
মহাঋষিসহ আমাদের সকল পূর্বপুরুষদের
ব্যবহৃত সম্বোধন ‘নমস্কার’
না বলে ‘হরে কৃষ্ণ’,’জয় রামজীকি’
ইত্যাদি ব্যবহার করা শুরু করেছেন।শুধু
তাই নয়,তাদের অনেকেই
উল্টো নমস্কার প্রদানকারী সাধারন
হিন্দুদেরকে জিজ্ঞেস
করছেন,”আপনারা কেন নমস্কার দেন?
হরে কৃষ্ণ দেয়া ই ভাল!”
প্রথমেই জেনে নেই নমস্কার
সম্বন্ধে কিছু তথ্য।
বৈদিক শাস্ত্রে ‘মুদ্রা’ হল হাতের
বা দেহের বিশেষ একটি অবস্থান।
নাট্যশাস্ত্রে ২৪ প্রকার মুদ্রার
বর্ননা করা হয়েছে।দুই হাত জোড় করার
এই বিশেষ মুদ্রাটির নাম
হল ‘অঞ্জলী মুদ্রা’।
এটির দুটো ব্যবহার-১)কাউকে দেখলে
অভিবাদন জানাতে যখন এটি ব্যবহার
করা হয় তখন একে বলা হয় নমস্কার।
২)বৈদিক সান্ধ্য উপাসনার শেষ
ধাপে যখন ঈশ্বরকে উদ্দেশ্য করে এই
মুদ্রা করা হয় তখন একে বলে প্রনাম-
আসন।
মূলত শব্দটি হল ‘নমস্তে’ যার
বাংলা রুপ হল নমস্কার। ‘নম’ শব্দের
অর্থ হল নত হওয়া বা শ্রদ্ধা/সম্মান
প্রদর্শন করা যার সাথে ‘তে’ ধাতু যুক্ত
হয় যার অর্থ তোমাকে অর্থাত্
নমস্তে অর্থ হল তোমার প্রতি রইল
শ্রদ্ধা।
ভারতের বিভিন্ন প্রাচীন
মন্দিরে এবং প্রত্নতাত্তিক
নিদর্শনে শ্রীকৃষ্ণ,শ্রীরামচন্দ্র সহ
বিভিন্ন ব্যক্তিত্ত্বের নমস্কাররত
অবস্থায় খচিত নকশা পাওয়া যায়।
আপস্তম্ব ও বৌধায়ন সুত্রেও
অভিবাদনের নিয়ম হিসেবে নমস্কার
দেবার কথা পাওয়া যায়।
পবিত্র বেদে অনেকবার ই
নমস্তে তথা নমস্কার প্রদানের
উল্লেখ পাওয়া যায়।
পবিত্র বেদে অনেকবার ই
নমস্তে তথা নমস্কার প্রদানের
উল্লেখ পাওয়া যায়।
নমস্তে স্ত্বায়তে নমো অস্তু পরায়তে।
নমস্তে রুদ্র তিষ্ঠতে আসীনাযোত
তে নমঃ।।(অথর্ববেদ ১১.২.১৫)
অনুবাদ-নমস্কার তোমায়(কেননা)
আমাদেরকে দেয়া চৈতন্যের
জন্য,হে রুদ্র তোমায় নমস্কার
কেননা তুমি ই এই
বিবেকরুপে আমাদের মাঝে অবস্থান
কর!
আরেকটি মন্ত্র কৃষকদের অভিনন্দন
জানাতে গিয়ে বলছে-
নমস্তে লাঙ্গলেভ্যো নম…
বিরুত্ক্ষেত্রিযনাশন্যপা…(অথর্ববেদ
২.৮.৪)
অর্থাত্ যারা লাঙ্গল ও চাষের
মাধ্যমে জমিতে ফসল ফলান তাদের
জানাই নমস্কার।
অভিবাদনরুপে নমস্কার প্রদানের
উত্কৃষ্ট উদাহরন যজুর্বেদের
নিম্নলিখিত মন্ত্রটি-
নমো জ্যেষ্ঠায় চ কনিষ্ঠায় চ
নমং পূর্বজায় চাপরজায চ
নমো মধ্যমায় চাপগল্ভায় চ
নমো জঘন্যায় চ বুধ্ন্যায় চ।।(যজুর্বেদ
১৬.৩২)
অনুবাদ-নমস্কার
জ্যেষ্ঠদেরকে,নমস্কার
কনিষ্ঠদেরকে,নমস্কার
উচ্চবিত্ত,মধ্যবিত্ত,ধনী-
গরীব,জ্ঞানী,স্বল্পজ্ঞানী সকলকে!
অর্থাত্ এ
থেকে আমরা জানতে পারি যে
নমস্কার এমন ই এক অনন্য অভিবাদন
যাতে ধনী-গরীব,ছোট-বড়,শিক্ষিত-
অশিক্ষিত ভেদ নেই।যে কেউ ই
এটা যে কাউকে দিতে পারে।
আমাদের বৈদিক ঋষিগন সকলেই
নমস্কার দিয়ে অভিবাদন
জানাতেন,শ্রীরাম,শ্রীকৃষ্ণ সকলেই
নমস্তে ব্যবহার করতেন অভিবাদন
জানাতেন।আর তার ই ভক্তরুপ
ব্যক্তিগন আজ হিন্দুসমাজে নিয়ম চালু
করছে নমস্কার না বলে ‘হরে কৃষ্ণ’
ইত্যাদি নিজেদের
বানানো কথা বলতে।অথচ শ্রীকৃষ্ণ
নিজেও তাঁর ভক্তদেরকে নমস্কার বাদ
দিয়ে ‘হরে কৃষ্ণ’ বলতে বলেন নি।ঈশ্বর
অজ্ঞানীদের আলোর পথ দেখাক এই
কামনা থাকল।
তবে শেষ করার আগে একটি চমকপ্রদ
তথ্য দিয়ে শেষ করি।২০০২ সালের জুন
মাসে প্রকাশিত ইন্ট্যারন্যশনাল
ইয়োগা সোসাইটির
ম্যগাজিনে বলা হয়
যে তারা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার
মাধ্যমে দেখেছেন যে নমস্কার
ভঙ্গীতে অর্থাত্ অঞ্জলি মুদ্রায়
প্রানায়াম বা ধ্যন করলে তা হাতের
মাংসপেশীকে শিথিল
করে এবং এটি মাংসপেশীজনিত
ব্যথা নিরাময়ে উপকারী।
ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি
নমস্কার কি?
একজন বৈদিক তথা সনাতন হিন্দু
ধর্মালম্বী ব্যক্তির অন্যতম
একটি বৈশিষ্ঠ্য হল
কারো সাথে দেখা হলে কড়জোড়ে
তাকে নমস্কার প্রদান করে অভিবাদন
বা সম্মান জানানো।
কিন্তু হিন্দুসমাজ মানেই হল
ধর্মগ্রন্থকে বুড়ো আঙ্গুল
দেখিয়ে নিজে নিজে নতুন নিয়ম
বানানো,ঐক্য আমাদের পছন্দ
নয়,অযাচিত বিভেদেই আমাদের
আসক্তি।আর এই সুত্র ধরেই
অনেকে বিশেষত নির্দিষ্ট কিছু
সংগঠনের সদস্যরা সার্বজনীন
এবং পবিত্র বেদাদি কর্তৃক
অনুমোদিত,সকল প্রাচীন ঋষি-
মহাঋষিসহ আমাদের সকল পূর্বপুরুষদের
ব্যবহৃত সম্বোধন ‘নমস্কার’
না বলে ‘হরে কৃষ্ণ’,’জয় রামজীকি’
ইত্যাদি ব্যবহার করা শুরু করেছেন।শুধু
তাই নয়,তাদের অনেকেই
উল্টো নমস্কার প্রদানকারী সাধারন
হিন্দুদেরকে জিজ্ঞেস
করছেন,”আপনারা কেন নমস্কার দেন?
হরে কৃষ্ণ দেয়া ই ভাল!”
প্রথমেই জেনে নেই নমস্কার
সম্বন্ধে কিছু তথ্য।
বৈদিক শাস্ত্রে ‘মুদ্রা’ হল হাতের
বা দেহের বিশেষ একটি অবস্থান।
নাট্যশাস্ত্রে ২৪ প্রকার মুদ্রার
বর্ননা করা হয়েছে।দুই হাত জোড় করার
এই বিশেষ মুদ্রাটির নাম
হল ‘অঞ্জলী মুদ্রা’।
এটির দুটো ব্যবহার-১)কাউকে দেখলে
অভিবাদন জানাতে যখন এটি ব্যবহার
করা হয় তখন একে বলা হয় নমস্কার।
২)বৈদিক সান্ধ্য উপাসনার শেষ
ধাপে যখন ঈশ্বরকে উদ্দেশ্য করে এই
মুদ্রা করা হয় তখন একে বলে প্রনাম-
আসন।
মূলত শব্দটি হল ‘নমস্তে’ যার
বাংলা রুপ হল নমস্কার। ‘নম’ শব্দের
অর্থ হল নত হওয়া বা শ্রদ্ধা/সম্মান
প্রদর্শন করা যার সাথে ‘তে’ ধাতু যুক্ত
হয় যার অর্থ তোমাকে অর্থাত্
নমস্তে অর্থ হল তোমার প্রতি রইল
শ্রদ্ধা।
ভারতের বিভিন্ন প্রাচীন
মন্দিরে এবং প্রত্নতাত্তিক
নিদর্শনে শ্রীকৃষ্ণ,শ্রীরামচন্দ্র সহ
বিভিন্ন ব্যক্তিত্ত্বের নমস্কাররত
অবস্থায় খচিত নকশা পাওয়া যায়।
আপস্তম্ব ও বৌধায়ন সুত্রেও
অভিবাদনের নিয়ম হিসেবে নমস্কার
দেবার কথা পাওয়া যায়।
পবিত্র বেদে অনেকবার ই
নমস্তে তথা নমস্কার প্রদানের
উল্লেখ পাওয়া যায়।
পবিত্র বেদে অনেকবার ই
নমস্তে তথা নমস্কার প্রদানের
উল্লেখ পাওয়া যায়।
নমস্তে স্ত্বায়তে নমো অস্তু পরায়তে।
নমস্তে রুদ্র তিষ্ঠতে আসীনাযোত
তে নমঃ।।(অথর্ববেদ ১১.২.১৫)
অনুবাদ-নমস্কার তোমায়(কেননা)
আমাদেরকে দেয়া চৈতন্যের
জন্য,হে রুদ্র তোমায় নমস্কার
কেননা তুমি ই এই
বিবেকরুপে আমাদের মাঝে অবস্থান
কর!
আরেকটি মন্ত্র কৃষকদের অভিনন্দন
জানাতে গিয়ে বলছে-
নমস্তে লাঙ্গলেভ্যো নম…
বিরুত্ক্ষেত্রিযনাশন্যপা…(অথর্ববেদ
২.৮.৪)
অর্থাত্ যারা লাঙ্গল ও চাষের
মাধ্যমে জমিতে ফসল ফলান তাদের
জানাই নমস্কার।
অভিবাদনরুপে নমস্কার প্রদানের
উত্কৃষ্ট উদাহরন যজুর্বেদের
নিম্নলিখিত মন্ত্রটি-
নমো জ্যেষ্ঠায় চ কনিষ্ঠায় চ
নমং পূর্বজায় চাপরজায চ
নমো মধ্যমায় চাপগল্ভায় চ
নমো জঘন্যায় চ বুধ্ন্যায় চ।।(যজুর্বেদ
১৬.৩২)
অনুবাদ-নমস্কার
জ্যেষ্ঠদেরকে,নমস্কার
কনিষ্ঠদেরকে,নমস্কার
উচ্চবিত্ত,মধ্যবিত্ত,ধনী-
গরীব,জ্ঞানী,স্বল্পজ্ঞানী সকলকে!
অর্থাত্ এ
থেকে আমরা জানতে পারি যে
নমস্কার এমন ই এক অনন্য অভিবাদন
যাতে ধনী-গরীব,ছোট-বড়,শিক্ষিত-
অশিক্ষিত ভেদ নেই।যে কেউ ই
এটা যে কাউকে দিতে পারে।
আমাদের বৈদিক ঋষিগন সকলেই
নমস্কার দিয়ে অভিবাদন
জানাতেন,শ্রীরাম,শ্রীকৃষ্ণ সকলেই
নমস্তে ব্যবহার করতেন অভিবাদন
জানাতেন।আর তার ই ভক্তরুপ
ব্যক্তিগন আজ হিন্দুসমাজে নিয়ম চালু
করছে নমস্কার না বলে ‘হরে কৃষ্ণ’
ইত্যাদি নিজেদের
বানানো কথা বলতে।অথচ শ্রীকৃষ্ণ
নিজেও তাঁর ভক্তদেরকে নমস্কার বাদ
দিয়ে ‘হরে কৃষ্ণ’ বলতে বলেন নি।ঈশ্বর
অজ্ঞানীদের আলোর পথ দেখাক এই
কামনা থাকল।
তবে শেষ করার আগে একটি চমকপ্রদ
তথ্য দিয়ে শেষ করি।২০০২ সালের জুন
মাসে প্রকাশিত ইন্ট্যারন্যশনাল
ইয়োগা সোসাইটির
ম্যগাজিনে বলা হয়
যে তারা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার
মাধ্যমে দেখেছেন যে নমস্কার
ভঙ্গীতে অর্থাত্ অঞ্জলি মুদ্রায়
প্রানায়াম বা ধ্যন করলে তা হাতের
মাংসপেশীকে শিথিল
করে এবং এটি মাংসপেশীজনিত
ব্যথা নিরাময়ে উপকারী।
ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি
কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল এ পৃথিবী?(বেদ ও বিজ্ঞান)
কিভাবে সৃষ্টি হয়েছিল এ পৃথিবী? আদিকাল থেকে এখনো পর্যন্ত এ যেন মানুষের এক অনন্ত জিজ্ঞাসা। সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে বেদ এর বিখ্যাত নাসাদিয় সুক্ত এবং হিরন্যগর্ভ সুক্ত এর কথা অনেকেই জানেন।ধর্মবিশেষজ্ঞ ও বিজ্ঞানী মহলে বহুল আলোচিত এই দুটি সুক্তের আলোকে সৃষ্টিতত্ত্ব সংক্ষেপে আলোচনা করা হল-
ঋগবেদ ১০/১২৯/১
“নাসাদাসিস নঃ সদাসিত্ তদানীম নাসিদ রজ ন ব্যামাপ্রো যৎ…”
“শুরুতে কোন অস্তিত্ব(সৎ) বা অনস্তিত্ব(অসৎ) ছিলনা।সেখানে ছিলনা কোন বায়ুমন্ডল”
ঋগবেদ ১০/১২৯/৩
“তম অসিৎ তমস… তপসস্তন্মহিনাজা
য়াতৈকম”
“চারদিক ছিল অন্ধকারাচ্ছন্ন।সমস্ত জিনিস একত্রে পুন্জীভুত ছিল।সেখান থেকে প্রচন্ড তাপের সৃষ্টি হল”
একইভাবে
ঋগবেদ ১০/১২১/১
“হিরন্যগর্ভ সামাভরতাগ্রে..”
“প্রথমেই হিরন্যগর্ভ সৃষ্টি হল”
ঋগবেদ ১০/১২১/৭
“আপ হ য়দ বৃহাতিরিবিশ্বমায়ান গর্ভম…”
“সেই হিরন্যগের্ভ ছিল উত্তপ্ত তরল যাতে ছিল সৃষ্টির সমস্ত বীজ”
একই ধরনের কথা বলছে শতপথ ব্রাক্ষ্মন ১১.১.৬.১
“হিরন্যগর্ভানি অপঃ তে সলিলা…”
“প্রথমে হিরন্যগর্ভ সৃষ্টিহল।সেখানে
ছিল উত্তপ্ত গলিত তরল।এটি ছিল মহাশুন্যে ভাসমান।বছরের পরবছর এই অবস্থায় অতিক্রান্ত হয়।”
ঋগবেদ ১০.৭২.২
“তারপর যেখানে বিস্ফোরন ঘটল গলিত পদার্থ থেকে,বিন্দু থেকে যেন সব প্রসারিত হতে শুরু হল”
ঋগবেদ ১০.৭২.৩
“সেই বিস্ফোরিত অংশসমূহ থেকে বিভিন্ন গ্রহ,নক্ষত্র তৈরী হল”
ঋগবেদ ১০.৭২.৪
“তার এক জীবনপ্রদ অংশ থেকে পৃথিবী সৃষ্টি হল”
ঋগবেদ ১০.৭২.৮-৯
“তারপর সৃষ্ট ক্ষেত্রে সাতধাপে সংকোচন-প্রসারন সম্পন্ন হল।তারপর সৃষ্টি হল ভারসাম্যের।”
এই অংশটুকু পরলেই স্পষ্ট বোঝা যায় বেদের সৃষ্টিতত্ত আধুনিক বিজ্ঞানের সাথে কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ।সৃষ্টিতত্তের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য মডেল “Lambda-CDM Concordance Model” অনুযায়ী “The evolution of the universe from a very uniform, hot, dense primordial state to its present অর্থাৎ একটি উত্তপ্ত, কেন্দ্রীভূত আদি অবস্থা থেকেই বর্তমান অবস্থার উত্থান।” এছাড়া বেদএ উল্লেখিত বিস্ফোরণ বর্তমান বিশ্বের বহুল আলোচিত বিগ ব্যাংগ তত্তের সাথে প্রায় পুরোপুরি মিলে যায়।
আশ্চর্যের এখানেই শেষ নয়।বেদ এর মতে সৃষ্টির শুরুতেই ওঁম উচ্চারিত হয় আর এর প্রভাবেই হয় বিস্ফোরন ।
বেদান্ত সূত্র(4/22) “অনাবৃতিঃ শব্দহম” অর্থাৎ শব্দের মাধ্যমেই সৃষ্টির শুরু যা মাত্র দুই বছর আগে বিজ্ঞানীরা আবিস্কার করেছেন।
এই শব্দ তরঙ্গকে আধুনিক বিজ্ঞানের ভাষায় Cosmic sound wave বলা হয়। ইউনিভার্সিটি অব এরিজোনা এর এস্ট্রোনমির প্রফেসর ডেনিয়েল জে আইনস্টাইন এবং জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটির পদার্থবিদ্যার প্রফেসর চার্লস বার্নেটের সম্মিলিত আর্টিকেল “Cosmic sound wave rules” থেকে কি করে এই শব্দের মাধ্যমে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হল তার ব্যখ্যা দেয়া হল। আমরা জানি যে সৃষ্টির শুরুতে মহাবিশ্ব ছিল একটি ঘন,উত্তপ্ত পিন্ড(বেদের ভাষায় হিরন্যগর্ভ বা হিরন্ময় ডিম)।
এই পিন্ডের মধ্যস্থিত পদার্থসমূহকে Cosmologist রা দুই ভাগে ভাগ করেন-Baryonic&Non-baryonic.Baryonic পদার্থ হল ইলেকট্রন,প্রোটন ও নিউট্রন।এইসময় এরা সকলেই ছিল আয়নিত অবস্থায়। প্রসারন শুরু হবার জন্য মূল ভূমিকা ই ছিল এই উত্তপ্ত ও আয়নিত Baryonic পদার্থগুলোর মধ্যস্থিত ইলেকট্রনগুলোর মাধ্যমে নিঃসৃত ফোটন কনাগুলো(Compton scattering of photon from electron)।এই ফোটন কনাগুলো উত্তপ্ত প্লাসমার সাথে Baryon-photon fluid তৈরী করে।কনাসমূহের মধ্যে সংঘর্ষের কারনে এই Fluid এর সংকোচন ঘটে কিন্তু এই সংকোচিত প্লাসমাই ফোটনসমূহকে উচ্চ বেগে বিচ্ছুরিত করে।যে স্থান থেকে ফোটনসমূহ নির্গত হয়ে যায় সেই স্থান ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় সেখানে একটি নিম্নচাপ যুক্ত স্থান তৈরী হয় যা তার চারদিকের Fluid দ্বারা চাপ প্রাপ্ত হয়।আর এই চাপই সেই পানিতে একটি শব্দ তরঙ্গের সৃষ্টি করে,শুধু পার্থক্য হল এই যে এখানে কাউকে মুখে শব্দ করে তরঙ্গ তৈরী করতে হয়নি বরং ফোটন নির্গত হয়ে যাওয়ায় সৃষ্ট চাপের কারনেই এই তরঙ্গের তৈরী হয়। আর বৈদিক সৃষ্টিতত্ত্ব মতে এই শব্দ হল ওঁ! তাই বেদের সৃষ্টিতত্ত পড়ে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এর Dr. Kevin Hurley বলেছিলেন
“How could Aryan sages have known all this 6000 years ago, when scientists have only
recently discovered this using advanced equipments which didn’t exist that time!”
নোবেল লরেট Count Maurice Maeterlinck বৈদিক সৃষ্টিতত্ত্ব নিয়ে বলেন “A Cosmogony which no European conception has ever surpassed!”
প্রশ্ন- আপনারা আর্যরা শুধু বেদ বেদ করেন অথচ গীতাতো বেদকে পুষ্পিত বাক্য বলেছে ও বিবেকবর্জিত লোকেরাই এর দ্বারা আসক্ত হয় বলেছে।
উত্তর-বেদ, বেদান্ত ও উপনিষদ আপনি বা আপনারা মনে হয় চোখেও দেখেন নাই অধ্যায়ন তো দূরের কথা।
আর গীতা থাকলেও পুরোটা অধ্যায়ন করেছেন বলে মনে হয় না অথবা পড়লেও বুঝেছেন বলে মনে হয় না। বেদ বেদান্ত উপনিষদে নাই গেলাম, ইসকনের গীতা ও তাদেরই করা তাৎপর্য থেকেই আপনার কথাটা মিথ্যা প্রমাণ করে দিচ্ছি। দেখুন- . গীতার ২।৪২ও৪৩নং শ্লোকে আপনার কথাটাই বলা আছে, তবে বেদের চরম উদ্দেশ্য যে এটা নয় তা গীতার ১৫।১৫ স্পষ্ট বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে “আমিই (ঈশ্বরই) সমস্ত বেদের জ্ঞাতব্য এবং আমিই বেদান্তকর্তা ও বেদবিৎ” অর্থাৎ বেদের একমাত্র জানার বিষয় ঈশ্বর। . গীতা২।৪৬নং শ্লোকের তাৎপর্যে ইসকনের গীতায় বলা হয়েছে “বেদে যে কর্মকান্ড ও আচার অনুষ্ঠান ও যাগ যজ্ঞের বিধান দেওয়া আছে তার উদ্দেশ্য জীবকে ক্রমশ আত্ম তত্ত্বজ্ঞান লাভ করতে উৎসাহিত করা।” . এখন প্রশ্ন হল যারা আত্ম তত্ত্বজ্ঞানী তারা কি ঐ সব নিত্যকর্ম যথা যজ্ঞ আচার অনুষ্ঠান করবে না? এর উত্তর গীতাতেই বলা আছে দেখুন- . “তুমি শাস্ত্রোক্ত কর্মের অনুষ্ঠান কর .. কর্ম না করে কেউ দেহযাত্রাও নির্বাহ করতে পারেনা। ভক্তরা সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হন, কারণ তারা যজ্ঞাবশিষ্ট অন্নাদি গ্রহণ করেন। আর যারা নিজের জন্যই কেবল অন্ন পাক করে তারা কেবল পাপই ভোজন করে। আর প্রাণীর জীবন ধারণ থেকে শুরু করে বৃষ্টি ও অন্ন উৎপাদন তা সব শাস্ত্রোক্ত (বেদ) কর্ম থেকে যজ্ঞ উৎপন্ন হয়। বেদ থেকেই যজ্ঞাদি কর্ম উৎপন্ন হয়েছে। বেদ অক্ষর বা পরমেশ্বর থেকে প্রকাশিত। যে ব্যক্তি এই জীবনে বেদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত যজ্ঞ অনুষ্ঠান না করে, সে পাপী ব্যক্তির জীবন ধারণ করা বৃথা।” # গীতা ৩।৮-১৬. সংক্ষেপে. . তাহলে কেন গীতায় পূর্বে বেদকে বিবেক বিবেকবর্জিত পুষ্পিত বাক্য বলেছে? বেদকে বিবেক বর্জিত বাক্য বলেনি, বলেছে বিবেকবর্জিত লোকেরা বেদের পুষ্পিত বাক্যগুলোকে না বুঝে সকাম কর্ম করে। প্রকৃত পক্ষে বেদের মোক্ষ উদ্দেশ্য যারা ধর্মের কিছুই করে না ও বুঝে না তাদেরকে সকাম কর্মের মাধ্যমে ধর্মের পথে নিয়ে এসে নিষ্কাম কর্মে নিয়োজিত করার মাধ্যমে মুক্তি সুখ দেওয়া। গীতাতেই তাই বলা আছে- “ফলভোগের কামনা পরিত্যাগ করে যোগস্থ হয়ে স্বধর্ম বিহিত কর্ম আচরণ কর।” গীতা২।৪৮. . বেদ যদি শুধুমাত্র বিবেক বর্জিত বাক্যই হতো তাহলে কেন গীতায় যজ্ঞ নিয়ে নিম্নোক্ত কথাগুলো বলা হল? দেখুন- . “কেউ দ্রব্য দান রূপ যজ্ঞ করেন, কেউ তপস্যারূপ যজ্ঞ, কেউ অষ্টাঙ্গ ও কেউ পরমার্থিক জ্ঞান লাভের জন্য বেদ অধ্যায়নরূপ যজ্ঞ করেন। যজ্ঞের প্রভাবে পাপ থেকে মক্ত হয়ে তারা যজ্ঞাবশিষ্ট অমৃত আস্বাদন করেন এবং সনাতন ব্রহ্মকে লাভ করেন। হে কুরুশ্রেষ্ঠ! যজ্ঞ অনুষ্ঠান না করে কেউই এই জগতে সুখে থাকতে পারে না, তা হলে পরলোকে সুখপ্রাপ্তি কি করে সম্ভব? এই সমস্ত যজ্ঞই বৈদিক শাস্ত্রে অনুমোদিত হয়েছে…সেগুলোকে যথাযথ ভাবে জানার মাধ্যমে তুমি মুক্তি বা মোক্ষ লাভ করতে পারবে। দ্রব্যময় যজ্ঞ থেকে জ্ঞানময় যজ্ঞ শ্রেয়। সমস্ত কর্মই পূর্ণরূপে জ্ঞানরূপ যজ্ঞে গিয়ে শেষ হয়।” #গীতা ৪।২৮-৩৩. . এখন প্রশ্ন হল অগ্নিহোত্রাদি কর্ম কি করা উচিত না অনুচিত? এই ব্যাপারে গীতাতেই বলা আছে যে- “যিনি অগ্নিহোত্রাদি কর্ম ত্যাগ করেছেন এবং দৈহিক চেষ্টাশুন্য তিনি সন্ন্যাসী বা যোগী নয়। যিনি কর্মফলের আসক্তি ত্যাগ করে কর্তব্য কর্ম করেন তিনিই যথার্থ সন্যাসী বা যোগী।” গীতা ৬।১. এখন আমার প্রশ্ন ইসকনের প্রভুরা প্রতিদিন দ্রব্য যজ্ঞ করেন কিনা? . গীতার ১৩।১নং শ্লোকে অর্জুন যখন কৃষ্ণের কাছে ক্ষেত্র ও ক্ষত্রজ্ঞ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন, তখন কৃষ্ণ একটু বলার পরেই বলেছেন- . “ক্ষেত্র ও ক্ষেত্রজ্ঞের জ্ঞান ঋষিগণ কর্তৃক বিবিধ বেদবাক্যের দ্বারা পৃথক পৃথক ভাবে বর্ণিত হয়েছে। বেদান্তসূত্রে তা বিশেষ ভাবে যুক্তিযুক্ত সিদ্ধান্ত সহকারে বর্ণিত হয়েছে।”গীতা ১৩।৫. বেদ বেদান্ত যদি তথাকথিত বিবেক বর্জিত বাক্যই হত তাহলে কেন কৃষ্ণ বেদ বেদান্ত ও বৈদিক শাস্ত্রের কথা বার বার বলছেন? প্রকৃত পক্ষে কৃষ্ণ এটাই বলেছেন যে যারা বেদের মূল ভাব বুঝেনা তারা বিবেক বর্জিত। . বেদ যে প্রকৃত পক্ষে কি তা বুঝার জন্য গীতার ১৫।১-৬নং শ্লোকই যথেষ্ট, দেখুন- . “উর্ধ্বমূল ও অধঃশাখা যুক্ত একটি নিত্য অশ্বথু বৃক্ষের কথা বলা হয়েছে। বৈদিক মন্ত্রগুলো সেই বৃক্ষের পত্রস্বরূপ। যিনি বৃক্ষটিকে যানেন তিনিই বেদজ্ঞ। বৃক্ষের শাখাগুলো অধোভাগ ও উর্ধ্বভাগে বিস্তৃত, উহার বাসনারূপ মূলগুলো মানুষ্যলোকে অধোভাগে বিস্তৃত রয়েছে। সেগুলো মনুষ্যলোকে সকাম কর্মের বন্ধনে আবদ্ধ করে। এই সংসারে স্থিত জীবেরা উর্ধ্ব মূলের স্বরূপ উপলব্দি করতে পারে না। আদি,অন্ত ও স্থিতি যে কোথায় তা কেউ বুঝতে পারে না। তীব্র বৈরাগ্যরূপ শস্ত্রদ্বারা ছেদন করে সত্য বস্তুর অন্বেষণ করা কর্তব্য, যেখানে গমন করলে পুনরায় ফিরে আসতে হয় না। ‘আমি সেই আদি পুরুষের শরণ লইতেছি’ এই বলিয়া তার অন্বেষণ করতে হবে। যারা অভিমান ও মোহশুন্য, সঙ্গদোষ রহিত, নিত্য অনিত্য বিচার পরায়ন,কামনা বাসনা বর্জিত… তারা সেই পরম অব্যয় পদ লাভ করেন।..সেখানে গেলে আর এই জড় জগতে ফিরে আসতে হয় না।” # গীতা১৫ ।১থেকে৬নং সংক্ষেপ। . শাস্ত্র তথা বেদ বিধি যারা পরিত্যাগ করে তাদের কি গতি হবে ও বেদই যে একমাত্র প্রমাণ তা গীতা থেকেই দেখুন- . “যে শাস্ত্র বিধি পরিত্যাগ করে কামাচারে বর্তমান থাকে সে পরম গতি লাভ করতে পারে না। অতএব, কর্তব্য ও অকর্তব্য নির্ধারণে শাস্ত্রই তোমার প্রমাণ। শাস্ত্রে যে কর্ম বিধান বলা হয়েছে, তা জেনে তুমি সেই কর্ম করতে যোগ্য হও।”গীতা ১৬।২৩ও২৪. . “ফলের আশা রহিত ব্যক্তিগণ শাস্ত্রের বিধি অনুসারে অনুষ্ঠান করা কর্তব্য এভাবেই মনকে একাগ্র করে যে যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয় তা সাত্বিক যজ্ঞ। শাস্ত্র বর্জিত যজ্ঞকে তামসিক যজ্ঞ বলে। গীতা ১৭।১১,১৩। . বেদ উক্ত কর্ম কি ত্যাগ করা উচিত?গীতা বলিতেছে- . যজ্ঞ, দান ও তপস্যা ত্যাজ্য নয়,তা অবশ্যই করা কর্তব্য।গীতা ১৮।৫