★বেদোক্ত কর্ম পর্ব সংগঠন★

❏ কর্ম এক হোক —
সংগচ্ছধবং সংবদদ্ধং সংবো মানাংসি জানতাম্।
দেবাভাগং যথাপূর্ব্বে সংজানানা উপাসতে।।
➢ ঋগ্বেদ. ১০/১৯১/২|
বঙ্গানুবাদঃ- হে মনুষ্য! তোমরা একসঙ্গে চল, একসঙ্গে মিলিয়া আলোচনা কর, তোমাদের মন উত্তম সংস্কার যুক্ত হউক। পূর্ব্বকালীন জ্ঞানী পুরুষেরা যেরূপ কর্ত্তব্য কর্ম্ম সম্পাদন করিয়াছেন তোমরাও সেইরূপ কর।।
❏ চিত্ত এক হোক—
সমানো মন্ত্রঃ সমিতিঃ সমানী সমানসংখ্যক মন সহচিত্তমেষাম্।
সমানসংখ্যক মন্ত্রমভি মন্ত্রয়ে বঃ সমানেন বো হবিষা জুহোমি।।
➢ ঋগ্বেদ.১০/১৯১/৩|
বঙ্গানুবাদঃ- তোমাদের সকলের মত এক হউক, মিলন ভূমি এক হউক, মন এক হউক, সকলের চিত্ত সম্মিলিত হউক, তোমাদের সকলকে একই মন্ত্রে সংযুক্ত করিয়াছি, তোমাদের সকলের জন্য অন্ন ও উপভোগ একই প্রকারে দিয়াছি।।
❏ লক্ষ্য এক হোক —
সমানী ব আকুতি সমানা হৃদয়ানি বঃ।
সমানমস্তুু বো মনো যথা বঃ সু সহাসতি।।
➢ ঋগ্বেদ. ১০/১৯১/৪|
বঙ্গানুবাদঃ- তোমাদের সকলের লক্ষ্য সমান হউক, তোমাদের হৃদয় সমান হউক, তোমাদের মন সমান হউক। এইভাবে তোমরা সকলের শক্তি বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হউক।
❏ মিত্র দৃষ্টি —
দৃতে দৃংহ মা মিত্রস্য মা চক্ষুষা সর্ব্বাণি ভূতানি সমীক্ষন্তাম্।
মিত্রস্যাহং চক্ষুষা সর্ব্বাণি ভূতানি সমীক্ষে।
মিত্রস্য চক্ষুষা সমীক্ষামহে।।
➢ যজুর্বেদ. ৬৬/১৮ |
বঙ্গানুবাদঃ- হে দুঃখনাশক পরমেত্মন্ ! আমাকে সুখের সহিত বর্দ্ধন কর। সব প্রাণী আমাকে মিত্রের দৃষ্টিতে দেখুক। আমি সর্ব্ব প্রাণীকে মিত্রের দৃষ্টিতে দেখি। আমরা একে অন্যকে মিত্রের দৃষ্টিতে দেখি।
❏ মিলন —
সংবঃ পৃচ্যন্তাং তম্বঃ সংমনাংসি সমুব্রতা।
সং বোহয়ং ব্রহ্মণস্পতির্ভগঃ সংবো অজিগমৎ।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৬/৭৪/১ |
বঙ্গানুবাদঃ- তোমাদের শরীর মন এবং কর্ম্ম একসঙ্গে মিলিয়া থাকুক। হে জ্ঞানের রক্ষক। ঐশ্বর্যময় প্রভো! সকলকে মিলাইয়া রাখ।
❏ সন্তোষ —
সংজ্ঞপনং বো মনসোহথ সংজ্ঞপনং হৃদঃ।
অথচো ভগস্য যচ্ছান্তং তেন সংজ্ঞপয়ামি বঃ।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৬/৭৪/২|
বঙ্গানুবাদঃ- তোমাদের মনের উত্তম জ্ঞান, হৃদয়ের সন্তোষ ভাব এবং ভাগ্যের শ্রান্তি এই সব দ্বারা তোমাদের সন্তোষ বিধান করিতেছি।
❏ ব্রাহ্মণ -ক্ষত্রিয় —
যত্র ব্রহ্মচ ক্ষত্রংচ সম্যঞ্চৌ চরতঃ সহ।
তংলোকং পূণ্যং প্রজ্ঞেয়ং যত্রদেবাঃ সহাগ্নিনা।।
➢ যজুর্বেদ. ২০/২৫ |
বঙ্গানুবাদঃ- যেখানে জ্ঞানীরা এবং বীর পুরুষেরা একসঙ্গে বাস করেন, যেখানে বিদ্বানেরা তেজের সঙ্গে থাকেন সাই দেশকে পূণ্য ও জ্ঞানময় জানিবে।
❏ সকলে ভাই ভাই —
অজ্যেষ্ঠাসো অকনিষ্ঠাসঃ এতে সং ভ্রাতরো তাবৃধুঃ সৌভগায়।
যুব পিতা স্বপা রুদ্র এসাং সুদুঘা পুশ্নিঃ সুদিনা মরুদ্ভঃ।।
➢ ঋগ্বেদ. ৫/৬০/৫ |
বঙ্গানুবাদঃ- মনুষ্যের মধ্যে কেহ বড় নয় বা কেহ ছোট নয়। ইহারা ভাই ভাই। সৌভাগ্য লাভের জন্য ইহারা প্রযত্ন করে। ইহাদের পিতা তরুণ শুভকর্ম্ম ঈশ্বর এবং মাতা দুগ্ধবতী প্রকৃতি। প্রকৃতি মাতা ক্রন্দনহীন পুরুষার্থী সন্তানকেই সুদিন প্রদান করে।
❏ জন্মভূমি —
তে অজ্যেষ্ঠা অকনিষ্ঠাস উদ্ভিদো হমধ্যমাসেঃ মহসা বি বাবৃধুঃ।
সুজাতাসো জনুষঃ পৃশ্নি মাতরা দিবো মর্যা আ নো অচ্ছা জিগতন।।
➢ ঋগ্বেদ. ৫/৫৯/৬|
বঙ্গানুবাদঃ- মনুষ্যের মধ্যে কেহ বড় নয় কেহ ছোট নয় এবং কেহ মধ্যম নয় তাঁহারা সকলেই উন্নতি লাভ করিতেছে। উৎসাহের সঙ্গে বিশেষ ভাবে ক্রমোন্নতির প্রযত্ন করিতেছে। জন্ম হইতেই তাঁহারা কুলীন। তাঁহারা জন্মভূমির সন্তান দিব্য মনুষ্য। তাঁহারা আমার নিকট সত্য পথে আগমন করুক।
❏ অস্পৃশ্যতা বর্জন —
সহৃদ্বয়ং সাংমনস্যমবিদ্বেষং কৃণোমি বঃ।
অন্যো অন্যমভি হর্যত বৎসং জাতমিবাঘ্ন্যা।।
➢ অউর্ব্ববেদ. ৩/৩০/১ |
বঙ্গানুবাদঃ- আমি তোমাদের জন্য সহৃদয়তা, উত্তম মন, নির্বৈরতা প্রদান করিয়াছি। তোমরা একে অন্যের প্রতি গাভী যেমন নবজাত বৎসের মলিন শরীরকে সর্ব্বশ্রেষ্ঠ অঙ্গ জিহ্বা দ্বারা পরিষ্কার করে সেইরূপ প্রেম কর।
❏ পিতা -পুত্র —
অনুব্রত পিতুঃ পুত্রশোক মাত্রা ভবতু সংমনাঃ।
জায়াপত্যে মধমতীং বাচং বদতু শংতিবাম্।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৩/৩০/২|
বঙ্গানুবাদঃ- পুত্র পিতার অনুকুলে কার্য করিবে, মাতার সহিত সৎ ভাবে থাকিবে। পত্নী পতির সহিত শান্ত ও মধুর বচন বলিবে।
❏ ভ্রাতা ভাগ্নী —
মা ভ্রাতা ভ্রাতারং দ্বিক্ষম্মা স্বসারমুতস্বসা।
সম্যঞ্চঃ সব্রতা ভূত্বা বাচং বদত ভদ্রয়া।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৩/৩০/৩|
বঙ্গানুবাদঃ- ভ্রাতা ভ্রাতাকে দ্বেষ করিবে না। ভাগ্নী ভগ্নীকে দ্বেষ করিবে না। তোমরা সকলে সম মতাবলম্বী ও সম কর্ম্মাবলম্বী হইয়া সৎ ভাবে বার্ত্তালাপ কর।
❏ অবিরোধ —
যেন দেবা ন বিযংতি নোচ বিদ্বিষতে মিথঃ।
তৎকৃন্মো ব্রহ্ম বো গৃহে সংজ্ঞানাং পুরুষেভ্যঃ।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৩/৩০/৪|
বঙ্গানুবাদঃ- যাহাতে জ্ঞানীদের মধ্যে বিরোধ না হয়, পরস্পরের মধ্যে বিদ্বেষ না জন্মে সেই উত্তম জ্ঞান তোমাদের গৃহে মনুষ্যের মধ্যে দান করিয়াছি।
❏ সম্বন্ধ —
জ্যায়স্বন্তশ্চিত্তিনো মা বি যৌষ্ট সংরাধয়ন্ত সধুরাশ্চরন্ত।
অন্যো অন্যস্মৈ বল্পুবদন্ত এত সব্রীচী সাম্বঃ সংমনসস্কৃণোমি।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৩/৩০/৫ |
বঙ্গানুবাদঃ- তোমরা জ্যেষ্ঠর সন্মান করিও। তোমরা বিচারশীল সাধক্ একই বন্ধনের নীচে আবদ্ধ হইয়া চলিতেছ। তোমরা পৃথক হইও না। একে অন্যের সঙ্গে মনোহর কথাবার্ত্তায় অগ্রসর হও।
❏ পানাহার —
সমানী প্রপা সহ বোরন্নভাগঃ সমানে যোক্তো সহ বো যুনজোমি।
সমঞ্চোহগ্নিং য়পর্যতারা নাভি মিবাভিতঃ।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৩/৩০/৬|
বঙ্গানুবাদঃ- তোমাদের পান এক সঙ্গে, ভোজনও এক সঙ্গে হউক। তোমাদিগকে এক সঙ্গে একই প্রেমবন্ধনে যুক্ত করিয়াছি। সকলে মিলিয়া পরমাত্মাকে পূজা কর। রথচক্রের কেন্দ্রের চারিদিকে যেমন অর থাকে তোমরা সেই ভাবে থাক।
❏ অতি ভোজন —
সঘ্রীচীনাম্বঃ সংমনসস্কৃণোম্যেকশষ্টীস্তুসংবননেন সর্বান্।
দেবা ইবাহ মৃতং রক্ষমাণাঃ সায়ংপ্রাতঃ সৌমনসো বো অস্ত।।
➢ অথর্ব্ববেদ. ৩/৩০/৭|
বঙ্গানুবাদঃ তোমরা সৎভাবে একই পথে অগ্রসর হও, চিত্ত তোমাদের উন্নত হউক, পানাহার তোমাদের এক সঙ্গে হউক -আমি তোমাদের জন্য এইরূপ ব্যবস্থাই করিয়াছি। অমৃত রসে আপ্লুত বিদ্বানদের ন্যায় প্রাতে ও সায়ংকালে তোমাদের চিত্ত প্রসন্ন হউক।
● ও৩ম্ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃশ্ ।।।
● সংগ্রহঃ পন্ডিত দিনবন্ধু বেদশাস্ত্রীর (কোলকাতা আর্য সমাজ) বেদ ভাষ্য থেকে সংগৃহিত।
● ডক্ সম্পাদনাঃ আর্য বিশ্বজিৎ রায়।
❖ রাখি পূর্ণিমা ১ লা ভাদ্র ১৪২৩ বাংলা। 18/08/2016 খৃষ্টাব্দ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *