গায়ত্রী মন্ত্রের ব্যাখ্যা ও বৈজ্ঞানিক তাৎপর্য।

গায়ত্রী মন্ত্র হল বৈদিক
হিন্দুধর্মের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্র। প্রচলিত বিশ্বাস অনুসারে,বেদের অন্যান্য মন্ত্রের মতো গায়ত্রী মন্ত্রও “অপৌরষেয়” (অর্থাৎ,কোনো মানুষের দ্বারা রচিত নয়) এবং এক ব্রহ্মর্ষির কাছে (গায়ত্রী মন্ত্রের ক্ষেত্রে ব্রহ্মর্ষি বিশ্বামিত্র ) প্রকাশিত। এই মন্ত্রটি
বৈদিক সংস্কৃত ভাষায় রচিত। এটি ঋগ্বেদের মণ্ডলের (৩।৬২।১০) একটি
সূক্ত । গায়ত্রী মন্ত্র গায়ত্রী ছন্দে রচিত। ওঁ ভূর্ভুবঃ স্বঃ
তৎ সবিতুর্বরেণ্যং ভর্গো দেবস্য ধীমহি। ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ।। [ ঋগবেদ ৩.৬২.১০,যজুর্বেদ ৩.৩৫,৩০.২,সামবেদ উত্তরার্চ্চিক ৬.৩.১০] পদচ্ছেদ: ওঁ-পরমাত্মা, ভূঃ-প্রাণস্বরুপ, ভূবঃ-দুঃখনাশক, স্বঃ-সুখস্বরুপ, তত্-সেই, সবিতু-সমগ্র জগতের সৃষ্টিকর্তা, বরেণ্যম-বরণযোগ্য সর্বোত্তম, ভর্গো-পাপ নাশক, দেবস্য-সমগ্র ঐশ্বর্য দাতা, ধীমহি-ধারণ করি, ধিয়ঃ-প্রজ্ঞাসমূহকে, য়ঃ-যিনি, নঃ-আমাদের , প্রচোদয়াত্-সত্য জ্ঞান প্রদান করুক। অনুবাদ-পরমাত্মা প্রাণস্বরুপ, দুঃখনাশক ও সুখস্বরুপ। সেই জগতসৃষ্টিকারী ও ঐশ্বর্যপ্রদাতা পরমাত্মার বরণযোগ্য পাপ-বিনাশক তেজকে আমরা ধারণ করি। তিনি আমাদের বুদ্ধিকে শুভ গুণ, কর্ম ও স্বভাবের দিকে চালনা করুক। গায়ত্রী মন্ত্রের বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণঃ (ওঁ ভূর্ভুবঃ স্বঃ )
ভূঃ-পৃথিবী, ভুবঃ-সূর্য, স্বঃ- ছায়াপথ বা আকাশগঙ্গা এই টার্মগুলো ব্যবহার করা হয়েছে। যখন একটি ফ্যান ৯০০ আরপিএম গতিতে ঘুরে, এটি বাতাসের মধ্য দিয়ে একটি শব্দ উৎপন্ন করে। একইভাবে যখন অসীম গ্রহমণ্ডলী,সৌর সিস্টেম,ছায়াপথ প্রতি সেকেন্ডে ২০,০০০ বার গতিতে ঘুরে,তারা একটি শব্দ উৎপন্ন করে। ঋষি বিশ্বামিত্র ধ্যানের মাধ্যমে এই শব্দ শুনতে চেষ্টা করেন এবং ঘোষণা করেন যে,এই শব্দ ঐশ্বরিক ওম। ঐ প্রজন্মের ঋষিরা সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, এই ওম এই সৃষ্টিতে সবসময় উৎপাদিত হয় এবং বিদ্যমান থাকে এবং নাকি ঈশ্বরের একটি উপায় তার সৃষ্টির সাথে যোগাযোগ করার। এমনকি গীতায়,শ্রীকৃষ্ণ ঘোষণা করেন যে,ঈশ্বরকে ওম ইতি একক্ষরম ব্রহ্ম হিসেবে, এটি দ্বারা বুঝায় যে ওম ছাড়া ঈশ্বরকে পূজা করার মত আর কোন আকৃতি নেই। যোগী এই শব্দকে “উদগীত নাদ” হিসেবে বলেন যা ধ্যানের সময় সমাধিতে পৌঁছানোর জন্য জপ করা হয় । এটা অন্য সব বৈদিক মন্ত্রের শুরুতে সংযোজন করা হয়। (তৎ সবিতুর্বরেণ্যং) তৎ-স্রষ্টা, সবিতুর-সূর্য নামক একটি গ্রহ যা সংস্কৃত অর্থ মতে সূর্যের সমার্থক, বরেণ্যম-তার সামনে নত হওয়া। এর মানে হল যে,আমরা স্রষ্টার সামনে নত হচ্ছি যার শব্দ ওম এবং যাকে অসীম গ্রহমণ্ডলী থেকে আগত আলোর মত দেখায়। (ভর্গো দেবস্য ধীমহি) ভর্গো-আলো, দেবস্য-দেবতা, ধীমহি-তাকে উপাসনা করা । যা অর্থ আ্মাদের আলো রুপে ঈশ্বরের উপাসনা করার প্রয়োজন।(ধিয়ো য়ো নঃ প্রচোদয়াৎ) ধিয়ো-জ্ঞান, য়ো-কেবা, নঃ-আমাদেরকে,প্রচোদয়াৎ- যথাযথ মাধ্যম / পথে । যার মানে যিনি আমাদের জ্ঞান দান করে থাকেন বা আমাদের জ্ঞান লাভ করতে সঠিক দেখান,সেই ঈশ্বর। এভাবে ঘুরন্ত অসীম ছায়াপথ থেকে নির্গত শক্তি এই সৃষ্টির সবদিকে ছড়িয়ে আছে বলে তাঁকে প্রনব বলা হয়। এই অনুরূপ K.E. = 1/2 mv2 । বেদের অনেক মন্ত্রের আগে তাই এই শক্তিশালী ওম যুক্ত করা হয়েছে এবং বিশ্বের এমনকি অনেক রিলিজিওনেও এই শব্দ সামান্য পরিবর্তন করে যোগ করেছেন এবং তাদের প্রার্থনায়ও যুক্ত করেছেন। প্রস্তুত করেছেন শ্রী প্রসেনজিত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *