All posts by Bikash

বেদ ও দস্যু, আর্য আক্রমণ তথ্য একটি ভ্রান্ত ধারণা।

ম্যাকলের কুটিল শিক্ষা নীতির কারনেই অনেক ভারতীয় বিদ্বান ইহা মানে যে, বেদের মধ্যে কথিত আর্য এবং দস্যুদের সংঘর্ষের বর্ননা রয়েছে। আর্যরা মধ্য এশিয়া থেকে এসেছে। ভারতের মূল নিবাসী দাস বা দস্যু ছিলো, যাদের আর্যরা এসে পরাজিত করে দাস বানিয়েছে। কঠোর ব্যবহার করে তাদের নিচু কাজ করিয়ে এবং সর্বদার জন্য ভারতবর্ষের উপর আধিপত্য স্থাপন করেছেন। এবং এই দেশের সত্যনাশ করার ষড়যন্ত্রের শামিল অনেক সাম্যবাদি ইহাই বলে যে, আর্যরা নিজ মহত্বকে জন্মগত ভেদভাবের আধারের উপর প্রতিস্থাপিত করেছেন। ভারতবর্ষকে বিভাজিত কারী এই বিচারের কারনে আজ স্বয়ং কে দ্রবিড় তথা দলিত ভাই- বোন যে নিজেকে নিজে অনার্য মানে।তাদের মনে বেদের প্রতি ঘৃণা এবং দ্বেষের বিষ ভরে গেছে। ডাঃ আম্বেডকার ও তাদের এই বিচারে সহমত ছিলো না। কারন এই মিথ্যা বিবাদ বেদের উপর আরোপ করা হয়েছে। এখান থেকে আর্য আক্রমন তত্ত্বের মিথ্যাচারের গল্পটি পড়ুন-
http://www.agniveerbangla.com/Aryan%20Invasion%20is%20False.html
অতএব এখন দেখার বিষয় বেদের মধ্যে আর্য এবং দস্যুর বাস্তবিক অর্থ কি?
মূলত ইহাই এই লেখার মূল উদেশ্য।
.
=>> আরোপঃ বেদের মধ্যে অনেক স্থানে আর্য এবং দস্যুদের বর্ণনা রয়েছে। অনেক মন্ত্রে দস্যুদের বিনাশ তথা আর্যের রক্ষার জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে। কিছু মন্ত্রে তো ইহা বলা হয়েছে যে, স্ত্রী যদি দস্যু হয় তবে তাকেও নিষ্কৃতি দেওয়া উচিত নয়। এ থেকে জানা যায় যে, বেদের মধ্যে দস্যুদের উপর আর্যের অত্যন্ত ঘাতক আক্রমনের বর্ণনা রয়েছে।
.
=>> সমাধানঃ-
ঋগবেদের মধ্যে দস্যু সংশ্লিষ্ট ৮৫ টি মন্ত্র রয়েছে। এর মধ্যে কিছু মন্ত্র আমরা পর্যালোচনা করবো-
=> হে শূরবীর রাজন! বিবিধ শক্তিযুক্ত আপনি একাকি বিচরন করে নিজ শক্তিশালী অস্ত্র দ্বারা ধনিক দস্যু (অপরাধী) এবং সনকঃ ( অধর্ম দ্বারা অন্যের ধন ছিনতাইকারী) কে বধ করুন। আপনার অস্ত্র দ্বারা তাহার মৃত্যু প্রাপ্ত হোক।
(ঋগবেদ ১।৩৩।৪)
.
এখানো “সতকঃ” শুভ কর্ম রহিত। এবং দস্যুর জন্য “অয়জ্ব” বিশেষন এসেছে অর্থাৎ যে সৎকর্ম রহিত। এবং ওইরূপ ব্যক্তিই পাপকারী ও অপরাধী হয়। অতএব এখানে রাজা প্রজার রক্ষার জন্য ঐ রূপ লোককে বধ করার জন্য বলছেন। সায়ন এই মন্ত্রে দস্যু শব্দের অর্থ চোর করেছেন। দস্যু শব্দটি “দস” ধাতু থেকে এসেছে যার অর্থ ” উপক্ষয়া”যে নাশ করে। অতএবঃ দস্যু কোন আলাদা জাতি নয়। পরন্তু দস্যু শব্দের অর্থ বিনাশকারী এবং অপরাধী প্রকৃতির লোক।
.
=>> যে দস্যু (দুষ্ট জন) শুভ কর্ম রহিত ও শুভকারীর সাথে দ্বেষ রাখে, আপনার রক্ষার প্রতাপ দ্বারা সে দূরে যাক। হে পরাক্রমী রাজেন্দ্র! আপনি সব স্থানে “অব্রত” (শুভ কর্ম রহিত) জন কে বাহিরে দূর করুন।
(ঋগবেদ ১।৩৩।৫)
.
এখানেও দস্যুর বিশেষন এসেছে “অয়জ্ব”( শুভ কর্ম রহিত এবং “অব্রতঃ (নিয়ম অপলানকারী তথা অনাচারী। পরিষ্কার যে, দস্যু শব্দ অপরাধীর জন্য এসেছে এবং সভ্য সমাজে ঈশ্বর ঐ সব লোক কে দন্ডের বিধান দিয়েছে।
.
=>> হে বীর রাজন! এই রোদনরত বা হাস্যরত দস্যু কে এই লোক থেকে দূর করে দিন এবং তাকে নষ্ট করে দিন। তথা যে শুভ কর্মযুক্ত তথা ঈশ্বরের গুনগান কারী মানুষ তাকে রক্ষা করুন।
(ঋগবেদ ১।৩৩।৭)
.
=>> হে রাজেন্দ্র! আপনি নিজের দক্ষতা দ্বারা কম্পনযুক্ত “অয়জ্বা , অব্রতী ” দস্যুকে কম্পায়মান করুন। যে প্রত্যেক বস্তুর উপভোগ কেবল স্বয়ং এর জন্য করে সেই দুষ্ট কে দূর করুন। হে মানুষের রক্ষক! আপনি উপদ্রব, অশান্তি উৎপন্নকারী দস্যুর নগর কে নষ্ট করুন।
(ঋগবেদ ১।৫১।৫)
.
এই মন্ত্রে দান পরোপকার রহিত, সবকিছু স্বয়ং ব্যায়কারী কে দস্যু বলা হয়েছে। কৌষিতকী ব্রাহ্মণে ঐ সব লোক কে অসুর বলা হয়েছে। অতএব দস্যু এবং অসুর দুইএর তাৎপর্য দুষ্ট অপরাধী।
.
=>> পরমেশ্বর আপনি আর্য ও দস্যুকে উত্তম প্রকারে জানেন। শুভ কর্মকারীর জন্য আপনি অব্রতী (শুভ কর্মের বিরোধী) দস্যুকে নষ্ট করুন। হে ভগবন! আমি উত্তম কর্মের প্রতি পালনের জন্য আপনার প্রেরনা সদা প্রার্থনা করি।
(ঋগবেদ ১।৫১।৭)
.
=>> হে রাজেন্দ্র! আপনি নিয়মের পালনকারী তথা শুভকর্ম কারীর কল্যান হেতু ব্রতরহিত দস্যুকে সংহার করুন। স্তুতি কারীর সাথে দ্বেষ রাখা,অনাচারী ঈশ্বরের গুনগান রহিত লোক কে বশে রাখুন।
(ঋগবেদ ১।৫১।৯)
.
=>> হে পরম ঈশ্বর্যবার রাজা! আপনি তিন প্রকারে সাধারন,স্পর্ধা ও সুখ কে বৃদ্ধির জন্য সংগ্রাম মধ্যে যজমানস্ আর্যম( উত্তম,গুন ও স্বভাব লোক) কে রক্ষা করুন। এবং অব্রতান্ (দুষ্ট আচরনকারী) যার অন্তঃকরন মলিন হয়ে গেছে। হিংসারত ও হিংসা ইচ্ছাকারী কে নষ্ট করুন।
(ঋগবেদ ১।১৩০।৮)
.
এখানে কৃষ্ণ ত্বক শব্দটি এসেছে যার অর্থ অন্তঃকরনের দুষ্ট ভাব। এবং সাথে তনৃষাণাম এবং অর্শসানম শব্দ এসেছে। যার অর্থ হিংসা করতে চায় বা হিংসা রত। ইহার বিপরীত শব্দ আর্য এখানে শ্রেষ্ঠ এবং পরোপকারী মানুষের জন্য এসেছে।
.
অতএব উত্তম স্বভাববান শান্তিপ্রিয়, পরোপকারী কে আর্য তথা অনাচারী এবং অপরাধী প্রবৃত্তিবান কে দস্যু বলে। ঋগবেদ ৬।২২।১০ এ আমাদের দাসকেও আর্য বানানোর শিক্ষা দেয়। পরিষ্কার যে আর্য ও দস্যু একটি ব্যক্তির গুনবাচক নাম কোন জাতিবাচক নাম নয়।
ঋগবেদ ৩।৩০।২৭ তথা ৭।১০৪।২ মন্ত্রে ব্রহ্মদ্বেষী, নরভক্ষক এবং কুটিল লোককে যুদ্ধের দ্বারা বশ রাখতে বলেছেন। ব্রহ্মদ্বেষী, নরভক্ষক এবং কুটিল লোক ও কোন আলাদা জাতি নয়। অপরাধী প্রবৃত্তির লোক কে দাস,দস্যু এবং ব্রহ্মদ্বেষী বলে।
বিদ্বান ব্যক্তিরা ইহা জানে যে, সৎ (সত্য) এবং অসৎ (অসত্য) পরস্পর সংঘর্ষ করতেই থাকে। সৎ অসৎ কে এবং অসৎ সৎ কে সর্বদা বশে রাখার চেষ্টা করে। এই দুই এর মধ্যে যে সৎ এবং ঋত (শাশ্বত সত্য) তাহকেই ঈশ্বর সদা রক্ষা করেন। এবং অসৎ কে হনন করেন।
তাই আসুন মিথ্যা অভিমান ত্যাগ করে ফিরে আসি ঋত ঋদ্ধির পথে।

অর্জুনের রথের ধ্বজায় কি হনুমানজী বিদ্যমান ছিলেন?

কিছু কিছু পৌরাণিক পন্ডিত দাবী করে অর্জুনের রথের ধ্বজায়(পতাকায়) নাকি স্বয়ং হনুমানজী ( ত্রেতা যুগের ) বিদ্যমান ছিলেন।
অর্জুনের রথের পতাকায় স্বয়ং হনুমানজী ছিলেন একথা মহাভারতে কোথাও বলা নেই।
যেমন আজকের অত্যাধুনিক মিসাইল, যুদ্ধবিমান ইত্যাদিতে পরিচয় বোধক বিভিন্ন চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। রাষ্টের ধ্বজা সেনাদের সমন্ধ বিভাগ করে। তাই সেনাদের চিহ্নিত করার জন্য বিভিন্ন প্রতীক ব্যবহার করা হয়। (কেউ কেউ সেনাদের পোশাক ভিন্নতা করে নিজ সৈন্য চিহ্নিত করার জন্য)
এই প্রকারে অর্জুনের রথে অনেক অনেক মহাপুরুষ, বীর যোদ্ধা, আর শ্রদ্ধেয় পুরুষদের ছবি অংকিত ছিলো। এগুলো ছিলো সম্মান আর সাহসের প্রতীক।
যারা বলে থাকে অর্জুনের রথে কেবল হনুমানজীর মূর্ত্তি ছিলো তারা যেন দয়া করে মহাভারতের
( উদ্যোগপর্বান্তর্গত যানসন্ধি পর্বের অধ্যায় ৫৬ এর ৭এবং ৮ সংখ্যক শ্লোক পরে দেখেন।)
সঞ্জয় উবাচ – প্রজানাথ! বিশ্বকর্মা ত্বষ্টা তথা প্রজাপতি ইন্দ্রের সাথে মিলে অর্জুনের রথের ধ্বজায় অনেক প্রকার রূপ তৈরী করেছেন। ৭
সেই তিন জন দেবমায়ার দ্বারা সেই ধ্বজা মধ্যে ছোট বড় অনেক প্রকার বহুমূল্য এবং দিব্য মূর্তিকে নির্মাণ করেছেন। ৮
এই শ্লোকেই স্পষ্ট প্রমান দেয় অর্জুনের ধ্বজার বর্ণন। এখানে কেবল হনুমানের কথা বলা হয় নি। ওখানে অনেক রাজা, বীর,মহাপুরুষ দের ছবিও ছিলো। একথা সত্য যে তার মধ্যে হনুমানজীর ছবিও অংকিত ছিলো।
কিন্তু কিছু পৌরাণিক বন্ধুগণ ধু সেখানে কেবল হনুমানজীকেই দেখতে পান। তারা মনেহয় এটা জানত না যে, সেখানে যোগেশ্বর স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ যেমন মহাবীর,বুদ্ধিমান আর জ্ঞানগম্ভীর চিন্তাধারার ছিলেন তেমনি ছিলেন পক্ষপাত শুন্য ব্যক্তি। তিনি কিকরে সেখানে কেবল হনুমানজীর ছবি দিতে দিতেন। এতে বাকি বীর মহাপুরুষ দের অপমান করা হতো না? তাছাড়া মহাভারতে তো বলাই আছে সেখানে অনেকের ছবি অংকিত ছিলো।
এক শ্রেণীর পৌরাণিক দের দাবী হনুমানজী নাকি সর্বদাই প্রভু শ্রী রামচন্দের চরণে সেবা করতেন,
আর এক শ্রেণীরর দাবি শ্রীরামচন্দ্র নাকি শ্রীকৃষ্ণ হয়ে জন্ম নিয়েছেন।
ফির সন্দেহের বিষয় যদি তাই হতো তাহলে যে ভক্ত তার প্রভূর চরণ ছাড়া বুঝত না সে কি করে প্রভুর মাথার উপরে উঠবে। এতে প্রভুর অপমান হবে না কি?
পৌরাণিক দের এই তর্ক কি করে শেষ হবে।
আসা করি এই পোষ্ট প্রকৃত সত্য জানতে সাহায্য করবে।

মনুস্মৃতি ও দন্ডব্যবস্থা।

মনুস্মৃতি ন্যায় ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় একটি পুস্তক। একটি রাজ্য শাসন এবং পরিচালনা করার জন্য কতগুলো নির্দিষ্ট আইন থাকে। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে অন্যায়কারীদের উপযুক্ত দন্ড প্রদান করা। মহর্ষি মনু মহারাজ তার বচনে সমাজ ব্যবস্থা এবং অপরাধীদের শিক্ষা দেবার জন্য কিছু দন্ড বিধান প্রণয়ন করেছেন। বিদ্যা, জ্ঞান ও সংস্কার দ্বারা দ্বিতীয় জন্ম প্রাপ্ত হওয়া দ্বিজ অথবা ব্রাহ্মণ কে মনু অধিক সম্মান প্রদান করেছেন।
[ এখানে উল্লেখ্য যে, জন্মগত ভাবে কেউ ব্রাহ্মণ বা দ্বিজ হয় না। ইহা সংস্কার এবং শিক্ষা সাপেক্ষ]
এরূপ উচ্চজ্ঞানসম্পন্ন বিদ্বান লোক অধিক সামর্থবান হয় এবং সমাজের কল্যাণ আনয়ন করে। অতঃপর সেও যদি নিজ দায়িত্ব পালন না করে এবং স্বধর্ম হতে বিচ্যুত হয় তবে অবশ্যই সেও দন্ডভাগী হবে।
নিম্নে এরূপ কিছু শ্লোক প্রস্তুত করা হয়েছে-
.
=>> স্বধর্ম হতে বিচ্যুত মাতা, পিতা, আচার্য্য আদি সবাই রাজা কর্তৃক দন্ডনীয় হবে-
.
পিতাচার্য্য সুহৃন্মাতা ভার্য্যা পুত্রঃ পুরোহিতঃ।
নাদন্ড্যো নাম রাজোহস্তি যঃ স্বধর্মে ন তিষ্ঠতি।।৩৩৫
.
পদার্থঃ (পিতা আচার্য সুহৃত মাতা ভার্যা পুত্রঃ পুরোহিত) পিতা, আচার্য, স্ত্রী, মাতা পুত্র এবং পুরোহিত কেউ হোক না কেন (যঃ স্বধর্ম ন তিষ্ঠতি) যে স্বধর্মে স্থিত নয় (রাজঃ অদন্ডমঃ নাম ন) রাজা তাদের যথোচিত দন্ড প্রদান করবেন।
(বিশুদ্ধ মনুস্মৃতি ৮।৩৩৫, ডঃ সুরেন্দ্রকুমার)
.
=>> অপরাধী রাজা সাধারনের চেয়ে অধিক সহস্রগুন দন্ড প্রাপ্ত হবে-
.
কার্ষপনং ভবেদ্দন্ড্যো যত্রান্যঃ প্রাকৃতো জনঃ।
তত্র রাজা ভবেদ্দন্ডঃ সহস্রমিতি ধারনা।।৩৩৬
.
পদার্থঃ (যত্র) যেই অপরাধে (অন্যঃ প্রাকৃতঃ জন) সাধারন মানুষের উপর (কার্ষপনং দন্ডদ্য, ভবেত) এক পণ দন্ড দেওয়া হয় (তত্র) সেই অপরাধে (রাজা, সহস্রং দন্ডদ্য, ভবেত) রাজা সহস্র পণ দন্ড প্রাপ্ত হবে।
(বিশুদ্ধ মনুস্মৃতি ৮।৩৩৬, ডঃ সুরেন্দ্রকুমার)
.
=>>উচ্চবর্ণের ব্যক্তি বর্গ অধিক দন্ড প্রাপ্ত হবে-
.
অষ্টাপদ্যন্ত শুদ্রস্য স্তেয়ে ভবতি কিল্বিষম্।
ষোড়শৈব তু বৈশ্যেষ্য দ্বাত্রিংশৎ ক্ষতিয়স্য চ।।৩৩৭
ব্রাহ্মণস্য চতুঃষষ্টিঃ পূর্ণং ব্যাপি শতং ভবেৎ।
দ্বিগুনা বা চতুঃষষ্টিস্তদ্দোষগুনবিদ্ধি সঃ।।৩৩৮
.
পদার্থঃ এভাবে (তত দোষগুণাবিত হি সঃ) যে কিছু বিবেকী হয়েও (স্তেয়ে) চুরি করে (শুদ্রস্য তু অষ্টাপাদ্যম) শুদ্রকে সেই চুরির কারনে আট গুন (বৈশ্যস্য তু ষোড়শ+এব) বৈশকে যোল গুন (ক্ষত্রিয়স্য দ্বাত্রিংশত) ক্ষত্রিয়কে বত্রিশ গুন (ব্রাহ্মণস্য চতুঃষষ্টি) ব্রাহ্মণকে চৌষষ্টি গুন (অপি বা শতম) বা শত গুন (বা) অথবা (দ্বিগুন চতুঃষষ্টি) একশত আটাইষ গুন (কিত্বিবর্ষং ভবতি) দন্ড হওয়া উচিত। অর্থাৎ যার যেমন জ্ঞান এবং যার প্রতিষ্ঠা অধিক, সেই অপরাধে সেইরূপ অধিক দন্ড প্রাপ্ত হবে।
(বিশুদ্ধ মনুস্মৃতি ৮।৩৩৭-৩৩৮, ডঃ সুরেন্দ্রকুমার)
.
=>> উপযুক্ত দন্ড প্রদান করে রাজা যশ এবং সুখ লাভ করবে-
.
অনেন বিধিনা রাজা কুর্ব্বাণঃ স্তেননিগ্রহম্।
যশোহস্মিন পাপ্তয়াল্লোকে প্রেত্য চানুত্তমংসুখম।।৩৪৩
.
পদার্থঃ (রাজা) রাজা (অনেন বিধিনা) উপরক্ত বিধি দ্বারা (স্তেননিগ্রহং কুর্বণিঃ) চোরকে নিয়ন্ত্রিত এবং দন্ডিত করে (অস্মিন্ লোকে যশঃ) এই জন্মে বা লোকমধ্যে যশ (চ) এবং (প্রেত্য) পরজন্মে (অনুত্তমং সুখম) উত্তম কে (প্রাপ্তুযাত) সুখ কে প্রাপ্ত করে।
(বিশুদ্ধ মনুস্মৃতি ৮।৩৪৩, ডঃ সুরেন্দ্রকুমার)
.
অতএব মহর্ষি মনুর বচন অনুযায়ী অপরাধীর পদ অনুসারে তার দন্ড নির্ধারিত হবে। মনু মহারাজ ব্রাহ্মণকে এবং উচ্চ শাসক কে কঠোরতম দন্ডের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কিন্তু সমাজে দেখা যায় তার উল্টো। উচ্চ প্রভাবশালী বর্ণ যদি আপন কর্তব্যবিমুঢ হয় এবং নিন্দনীয় কার্যও করেন তবুও তার দন্ড অতন্ত্য লঘু হয়।
মনুঃ ৭।১৭-২০ এ স্পষ্ট বলা আছে, দন্ডই ন্যায়ের প্রচারক এবং দন্ডই অনুশাসনকর্তা। চার বর্ণ এবং জীবনের চার আশ্রমের রক্ষক। ইহা রাষ্ট্রকে জাগৃত রাখে। এইজন্য বিদ্বানরা দন্ডকে ধর্ম বলেন।

মনুস্মৃতি ও বর্ণ ব্যবস্থা

মনুস্মৃতি কে সৃষ্টি মধ্যে নীতি এবং ধর্মের (কানুন) নির্ধারন কারী সবচেয়ে প্রথম গ্রন্থ মানা হয়। এবং সেই সময় জন্মগত জাতিব্যবস্থার প্রথা ছিলো না। মহর্ষি মনুও জন্মগত ভাবে সিদ্ধ জাতিব্যবস্থার সমর্থন করে নি।মনু মহারাজ মানুষের গুন কর্ম স্বভাবের উপর আধারিত সমাজ ব্যবস্থা রচনা করার জন্য উপদেশ করেছে। এবং ইহাই সঠিক বর্ণ ব্যবস্থা। বর্ণ শব্দটি “বৃঞ” ধাতু থেকে এসেছে। যার অর্থ চয়ন বা নির্ধারন করা। এবং কর্ম এবং গুন দ্বারা বর্ণ নির্ধারিত হবে ইহাই ছিলো মনুর বিধান। কিন্তু বর্তমানে জন্মগত ভাবে বর্ণপ্রথা চালু রয়েছে। যা মনু কখনোই স্বীকার করে নি। উচ্চ বংশে জন্মগ্রহনকারীরা সব সময় নিম্ম বর্ণের মনুষ্যকে উপেক্ষিত করে চলে।এবং জন্মগত পরিচয়ে নিজেকে অনেক বড় বলে মনে করেন।
.
মনুস্মৃতি ৩।১০৯ – এ স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, ব্রাহ্মণ ভোজনের জন্য স্বীয় কুল গোত্রের পরিচয় প্রদান করিবেন না। ভোজনের জন্য কুল ও গোত্রের পরিচয় করিয়া ভোজন করিলে তাকে উদগীর্ণভোজী বলে।
অতএব মনুস্মৃতি অনুসারে, যে ব্রাহ্মণ বা উচু জাতি নিজ গোত্র বা বংশের পরিচয় দিয়ে নিজেকে বড় বলেন। এবং মার সম্মানের অপেক্ষা রাখে, অবশ্যই সে তিরস্কার যোগ্য।
.
মনুস্মৃতি ২।১৩৬ – ন্যায়সঞ্চিত ধন, পিতৃব্যাদি সমন্ধ্য, বয়োধিকতা, শ্রেষ্ঠ কর্ম, বেদার্থতত্বজ্ঞান রূপ বিদ্যা এই পঞ্চ সম্মানের উত্তরোত্তর মানদন্ড।
এই শ্লোকে কোন কুল, জাতি বা বংশ কে সম্মানের মানদন্ড মানা হয় নি।
.
=>বর্ণের পরিবর্তন –
.
মনুস্মৃতি ১০।৬৫ – ব্রাহ্মণ ও শুদ্র হতে পারে এবং শুদ্রও ব্রাহ্মণ হতে পারে। এই প্রকার ক্ষত্রিয় ও বৈশ্যও নিজ নিজ বর্ণ পরিবর্তন করতে পারে।
.
মনুস্মৃতি ৯।৩৩৫ – শরীর এবং মন দ্বারা শুদ্ধ – পবিত্র এবং উৎকৃষ্ট লোকের সান্নিধ্যে স্থিত। মিষ্টিভাষী, অহংকার রহিত, নিজ থেকে উৎকৃষ্ট বর্ণের সেবাকারী শুদ্রও উত্তম ব্রহ্ম জন্ম বা দ্বিজ বর্ণকে প্রাপ্ত করতে পারে।
.
মনুস্মৃতি মধ্যে অনেক শ্লোক রয়েছে যেখানে বলা হয়েছে, উচ্চ বর্ণের ব্যক্তিও যদি শ্রেষ্ঠ কর্ম না করে তবে সে শুদ্র (অশিক্ষিত) বলে গন্য হবে।যেমন-
.
মনুস্মৃতি ২।১০৩ – যে মনুষ্য নিত্য প্রাত এবং সন্ধ্যায় ঈশ্বরের আরাধনা করে না তাহাকে শুদ্র বলে জানবে।
.
মনুস্মৃতি ২।১৭২ – যে ব্যক্তি বেদের শিক্ষাই দীক্ষিত হয় নি সে শুদ্র তুল্য।
.
মনুস্মৃতি ২।১৬৮ – যে ব্রাহ্মণ বেদের অধ্যয়ন বা পালন ছেড়ে অন্য বিষয়ে প্রযত্ন করেন সে শুদ্রত্ব প্রাপ্ত হয়।
.
মনুস্মৃতি ৪।২৪৫ – ব্রাহ্মণ বর্নস্থ ব্যক্তি শ্রেষ্ঠ অতিশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি সঙ্গ করে এবং নিচ থেকে নিচতর ব্যক্তির সঙ্গ ছেড়ে অধিক শ্রেষ্ঠ হয়। ইহার বিপরীত আচরনে পতিত হয়ে সে শুদ্রত্ব প্রাপ্ত হয়।
.
অতঃএব ইহা স্পষ্ট যে, ব্রাহ্মণ উত্তম কর্ম কারী বিদ্বান কে বলে। এবং শুদ্রের অর্থ অশিক্ষিত ব্যক্তি। ইহা কোন জন্মগত সমন্ধ্য নয়।
.
মনুস্মৃতি ২।১২৬ – এমনকি কেন ব্রাহ্মণ হোক, কিন্তু যদি সে অভিবাদনের উত্তর শিষ্টতার সহিত দিতে না জানে, তবে সে শুদ্র।
.
অর্থাৎ মনু জন্মসিদ্ধ বর্ণ প্রথার সমর্থন করে নি। মনুস্মৃতি অনুসারে মাতা পিতা তার সন্তানদের বাল্যকালে তার রূচি এবং প্রকৃতি জেনে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় বা বৈশ্যের বর্ণের জ্ঞান এবং প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত করার জন্য উপদেশ প্রদান করবেন। কোন ব্রাহ্মণ পিতা মাতা যদি তার সন্তান কে ব্রাহ্মণ তৈরী করতে চায় তবে অবশ্যই তার মধ্যে ব্রাহ্মণোচিত গুণ,কর্ম, স্বভাব জাগিয়ে তুলবেন।
.
মনুস্মৃতি ২।১৫৭ – যেমন কাষ্ঠনির্মিত হস্তি ও চর্ম্মনির্মিত মৃগ কোন কার্যকারক নহে। তদ্রুপ যে ব্রাহ্মণ বেদাধ্যয়ন না করে তিনিও কোন কার্যক্ষম নহে। কেবল ব্রাহ্মণের নাম মাত্র ধারন করেন।
.
=>>শিক্ষাই বাস্তবিক জন্ম –
.
মহর্ষি মনুর মতে মানুষের বাস্তবিক জন্ম বিদ্যাপ্রাপ্তিতেই ঘটে। জন্মত প্রত্যেক মানুষই শুদ্র অর্থাৎ অশিক্ষিত। এবং সংস্কার দ্বারা সে পরিশুদ্ধ হয়ে তার দ্বিতীয় জন্ম হয়। আর একেই দ্বিজ বলে। সংস্কারে অসমর্থ ব্যক্তি শুদ্রই রয়ে যায়।
.
মনুস্মৃতি ২।১৪৮ – সমস্ত বেদশাস্ত্রের পারদর্শী আচার্য্য অভিজাত বালকের যথাবিধিনুসারে গায়ত্রী উপদেশ করিয়া যে যথার্থ জন্ম উৎপাদন করেন, সে জন্মই ব্রহ্মপ্রাপ্তির কারন বলিয়া অজর ও অমর রূপে গণ্য হয়।
.
মনুস্মৃতি ২।১৪৬ – জন্মদাতা পিতা থেকে জ্ঞান দাতা আচার্য্য অধিক বড় এবং মাননীয়। আচার্য্য দ্বারা প্রদান করা জ্ঞান মুক্তি প্রদান করে। পিতা দ্বারা প্রদত্ত শরীর তো এই জন্মের সাথেই নষ্ট হয়।
.
=>> শুদ্রের প্রতি ভালো ব্যবহার
.
মনু পরম মানবীয় ছিলেন। তিনি জানতেন যে, কোন শুদ্র ইচ্ছাকৃত ভাবে শিক্ষাকে উপেক্ষা করতে পারবে না। তারা কোন কারন বশত জীবনের প্রথম ধাপে জ্ঞান এবং শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। এ জন্য মহর্ষি মনু শুদ্রদের জন্য সমাজে উচিত সম্মানের বিধান করেছেন। তিনি শুদ্রদের প্রতি কখনো অপমান সূচক শব্দ ব্যবহার করেন নি। মনুর দৃষ্টিতে জ্ঞান ও শিক্ষার অভাবে শুদ্র সমাজের মধ্যে সবচেয়ে অসহায়। যা পরিস্থিতির বশ। সে জন্য মনু সমাজে তাদের প্রতি অধিক সহৃদয়তা এবং সহনাভূতি দেখাতে বলেছেন –
.
মনুস্মৃতি ৩।১১২ – শুদ্র বা বৈশ্য অতিথি রূপে আসলে ব্রাহ্মণ তাকে সম্মানের সহিত ভোজন করাবেন।
.
মনৃস্মৃতি ৩।১১৬ – আপন সেবক (শুদ্র) কে প্রথম ভোজন করানোর পর দম্পতি ভোজন করবেন।
.
=>> মনুস্মৃতি বেদের উপর আধারিত
.
বেদ ঈশ্বরীয় জ্ঞান এবং সমস্ত বিদ্যা বেদ থেকেই নির্গত হয়। এবং বেদ কে মেনেই ঋষিরা অন্য সব গ্রন্থ রচনা করেছেন।বেদের স্থান এবং প্রামানিকতা সবার উপরে। এবং অন্যান্য স্মৃতি শাস্ত্রও মান্য যদি সেগুলো বেদানুকুল হয়। এবং বেদ যে ধর্মের মূলে মনু ইহা দৃঢতার সহিত মান্য করতেন।
.
মনুস্মৃতি ২।৮ – শাস্ত্র সকল জ্ঞানচক্ষু দ্বারা বিশেষরূপে পর্যালোচনা করিয়া বিদ্বানরা বেদমূলক কর্তব্যকর্ম্ম অবগত হইয়া তাহার অনুষ্ঠান করিবেন।
.
মনুস্মৃতি ২।১৩ – ধর্ম্ম জিজ্ঞাসু ব্যক্তির নিকট প্রকৃষ্ট প্রমাণ বেদ। যেহেতু বেদ ও স্মৃতির অনৈক্যে বেদের মতই গ্রাহ্য হয়।
.
এখানে ইহা স্পষ্ট যে, মনুর বিচার এবং মূল রচনা বেদানুকুল। তিনি বেদের আধারেই উপদেশ করেছেন। কিন্তু যদি মনুস্মৃতিতে বেদ বিরুদ্ধ কোন উপদেশ পাওয়া যায় , অবশ্যই তাহা প্রক্ষিপ্ত জানবে। কারন মনু বেদের বাহিরে গিয়ে কোন উপদেশ করেন নি। কিছু স্বর্থান্বেষী তাদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য তাদের মনগড়া শ্লোক সংযোজন করেছেন। যা সম্পূর্ণই ভ্রান্ত এবং বেদ বিরুদ্ধ।
.
অতএব মহর্ষি মনুর মত অনুসারে, বর্ণব্যবস্থা জন্মগত নয়। ইহা গুন, কর্ম এবং স্বভাব জাত। নিম্ন জাত বলে কাউকো হেয় করা নয়। বরং তাদেরকে সম্মান করা। বাস্তবিক ইহাই তো ধর্ম। মহর্ষি মনুর তো ইহাই চরম সিদ্ধান্ত। তাই তো তিনি বলেছেন-
যাহাতে ধর্ম রক্ষা হয়, এমত যত্ন করিবে। জগতে ধর্ম হতে শ্রেষ্ঠ আর কিছু নাই। (মনুঃ ৮।১৭)

যজ্ঞাদি কর্ম অধ্বর অর্থ্যাৎ অহিংসা কর্ম।

মহাভারত কালে এই বৃত্তান্ত এসেছে যে,
“যজ্ঞে হিংসার নিন্দা এবং অহিংসার প্রশংসা”
এই বৃত্তান্ত মহাভারতের শান্তিপর্বের অন্তর্গত ২৭২ অধ্যায়ে এসেছে। এখানে বলা হয়েছে যে, যদি কেউ যজ্ঞের মধ্যে পশু বধ করে, তবে নিশ্চয় তার সমস্ত তপ নষ্ট হয়ে যাবে।
.
তস্য তেনানুভাবেন মৃগহিংসাত্মনস্তদা।
তপো মহৎ সমুচ্ছিন্ন তস্মাদহিংসা ন যজ্ঞিয়া।।
অহিংসা সকলো ধর্মাহিংসা ধর্মস্তথাবিধঃ।
সত্যংতেহং প্রবক্ষামি, যো ধর্মঃ সত্যবাদিনাম।।
.
এই প্রকরেন মহারাজ যুধিষ্ঠির পিতামহ ভীষ্ম কে জিজ্ঞেস করছেন যে,
ধর্ম তথা সুখের জন্য যজ্ঞ কিভাবে করা উচিত?
ইহার উত্তরে পিতামহ এক তপস্বী ব্রাহ্মন ব্রাহ্মণী দম্পতির বৃত্তান্ত দিয়ে বললেন যে,
সেই তপস্বী ব্রাহ্মণের মহান তপ যজ্ঞের মধ্যে পশুবলি দেবার জন্য এক বণ্য মৃগ বধ করার ইচ্ছা মাত্র সমস্ত বিনষ্ট হয়ে গিয়েছিলো।
এইজন্য যজ্ঞের মধ্যে কখনো হিংসা করা উচিৎ নয়। অহিংসা সার্বত্রিক এবং সর্বকালীন নিত্য ধর্ম।
.
এই প্রমাণ দ্বারা জানা যায় যে, মহাভারত কালে পশু হিংসার বিধান ছিলো না।
এমনকি এর পূর্বেও পবিত্র বেদে এ প্রকরন এসেছে-
.
রাজসুয়ং বাজপেয়মগ্নিষ্টোমস্ত­দধ্বরঃ।
অকাশ্বমেধাবৃচ্ছিষ্টে জীব বর্হিমমন্দিতমঃ।।
(অথর্ববেদ ১১।৭।৭)
.
রাজসূয়, বাজপেয়,অগ্নিষ্টোম, অশ্বমেধ আদি সব যজ্ঞ অধ্বরঃ অর্থাৎ হিংসা রহিত যজ্ঞ। যাহা প্রাণীমাত্রকে বৃদ্ধি এবং সুখ শান্তি দাতা।
.
এই মন্ত্রে রাজসূয় আদি সব যজ্ঞকে অধ্বরঃ বলে গিয়েছেন। যার একমাত্র সর্ব্বসম্মত অর্থ হিংসা রহিত যজ্ঞ।
.
তাহলে ইহা স্পষ্ট যে, বেদের মধ্যে কোন যজ্ঞে পশুবধের আজ্ঞা নেই। তবুও বেদের নাম নিয়ে যজ্ঞে পশু বধ করা মানে নিজেকে ধোকা দেওয়া এবং নিজের অজ্ঞানতাকে প্রকাশ করা।
আবার ইহা দেখ যে, পশু বধ করে প্রাণীমাত্রের কিরকম বৃদ্ধি হচ্ছে? এবং মানুষ কি রকম সুখ প্রাপ্ত হচ্ছে?
পরন্ত প্রাণীহত্যা করার সময় তার ঘোর যাতনা প্রাপ্ত হয় এবং তার জীবনের সমাপ্তি ঘটে।
.
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, ইতিহাসও পশুবলির সমর্থন করে নি। এমন কি বেদও। কিন্তু কিছু মূর্খ যাজ্ঞিক( পৌরাণিক) লোক ” বৈদিকী হিংসা হিংসা ন ভবতি” এর ঢোল পিটিয়ে যজ্ঞে পশুবধ কে অহিংসার সঙ্গা দিয়ে স্বর্গের মার্গ কে প্রশস্ত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে।
.
এদের বিচার দেখে মনে যে,নিশ্চয় এরা তাদের বুদ্ধি ঘাসক্ষেতে রেখে এসেছিলেন। নতুবা এরকম অর্থ তারা করতো না।
” বৈদিকী হিংসা হিংসা ন ভবতি” এর অর্থে মনু মহারাজ কি বলেছেন দেখুন-
.
যা বেদবিহিতা হিংসা নিয়তাস্মিংশ্চরাচরে।
অহিংসামেব তাং বিদ্যাদ্বেদাদ ধর্মো হি নির্ব্বভৌ।।
যো হিংসকানি ভুতানি হিনস্ত্যান্তসুখেচ্ছয়া।
স জীবংশ্চ মৃতশ্চৈব, নকশ্চিক সুখমেধতে।।
(মনুস্মৃতি ৫।৪৪- ৪৫)
.
অর্থাৎ বেদে বিশ্ব সংসার মধ্যে দুষ্ট আততায়ী, ক্রুর পাপীকে দন্ড দান রূপ হিংসা বিহিত আছে তাহা অহিংসাই জানবে। কারন বেদ দ্বারাই যথার্থ ধর্মের প্রকাশ হয়।
কিন্তু ইহার বিপরীতে যে নিরপরাধ,অহিংস প্রাণীকে নিজ সুখ প্রাপ্তির জন্য হত্যা করে সে জীবিত অথবা মৃত এই দুই অবস্থায় কখনোই সুখ পায় না।
.
দুষ্টকে দন্ড প্রদান করা হিংসা নয় পরন্ত অহিংসারূপ পূণ্য তাহা মনুস্মৃতি ৮।৩৫১ এ স্পষ্ট আছে-
.
” নাততায়িবধে দোষো হন্তুর্ভবতি কশ্চন”
অর্থাৎ আততায়ি ( যে ব্যক্তি বধ উদ্যত) তাহাকে বধ করিলে কোন দোষ নেই।

তাহলে উপরিউক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয় যে যজ্ঞে পশু বধ নিষিদ্ধ। যে বেদ পশু পালনের সুস্পষ্ট নির্দেশ দেয়। সে বেদ পশু হত্যার বিধান কি করে দিতে পারে?

আধ্যাত্মবাদ

আত্মা কি? পরমাত্মা কি? এই দুইয়ের মাঝে সমন্ধ কি? এই বিষয়ের নাম আধ্যাত্মাবাদ।
আত্মা ও পরমাত্মা এই দুই বস্তু কোন ভৌতিক পদার্থ নয়। ইহা চর্ম চক্ষু দ্বারা দর্শন করা যায় না,কর্ণ দ্বারা শ্রবন করা যায় না, ইহা নাসিকার ঘ্রান থেকে মুক্ত,জিহ্বাগ্র দ্বারা আস্বাদন নেওয়া যায় না। ইহা ধরা ছোঁয়ার বাহিরে।
পরমাত্মা এক তিনি একাধিক নন। ব্রহ্মা, বিষ্ণু, মহেশ একই পরমাত্মার বিভিন্ন নাম।
(একং সদ্ বিপ্রা বহুধা বদন্তি)ঋগ্বেদ ১/১৬৪/৪৬ অথ্যাৎ একই পরমাত্মাকে বিদ্বান ব্যাক্তিগন বিভিন্ন নামে ডেকে থাকেন।
সংসারে জীবধারী প্রাণী অনন্ত। সেজন্য জীবাত্মা ও অনন্ত।

ন্যায়দর্শন অনুসারে জ্ঞান,প্রযত্ন, ইচ্ছা,দ্বেষ,সুখ,দু:খ এই ছয় গুন আত্মার মধ্যে অবস্তিত। জ্ঞান আর প্রযত্ন আত্মার স্বাভাবিক গুন, বাকি চার গুন আত্মা শরীর ধারণে লাভ করে। আত্মার উপস্থিতির কারণে এই শরীর প্রকাশিত। আত্মা ত্যাগ করতে সেই শরীর অপবিত্র,ও অপ্রকাশিত। এই সংসারও পরমাত্ম প্রাপ্তির সেই বিশেষ জ্ঞানের জন্য প্রকাশিত। আত্মা ও পরমাত্মা এই দুই বস্তুই অজন্মা,অনাদি অনন্ত। ইহা কখনো জন্মগ্রহণ করেন না, মৃতও হন না। আত্মকে কেউ সৃষ্টি করতে পারে না, আত্মা পরমাত্মার অংশ নয়। আত্মা ও পরমাত্মা ইহা দুইটি আলাদা ও সতন্ত্র সত্তা। আত্মা অনু স্বরুপ সুতরাং অনেক ছোট, আর পরমাত্মা সর্ব্ব্যপক। আত্মার জ্ঞান সীমিত, আর পরমাত্মা সর্বজ্ঞ। তিনি সবকিছুর জানতা, সব বিষয়ে তিনি জ্ঞাত। তিনি অন্তর্যামী তাই সকলের মনের অবস্থা জানেন। আত্মার শক্তি সীমিত পরন্তু পরমাত্মা সর্বশক্তিমান। সৃষ্টি, স্থিতি, প্রলয় সবকিছু পরমাত্মার ইচ্ছানুসারে হয়। পীর,পৈগম্বর,অবতার, এজেন্ট, দালাল ইত্যাদি তিনি রাখেন না, রাখার প্রয়োজন নেই,কারণ তিনি সর্বশক্তিমান। তার কার্য সম্পাদনের জন্য অবতার বা দালালের প্রয়োজন নেই। তিনি সব কাজ নিজ অন্তর থেকে সমাধান করেন। তার বাহিরে কিছু নেই। ঈশ্বর যা কিছু করেন না কেন তাহা হাত, পা দিয়ে করেন না,কারণ তিনি লিঙ্গশরীর মুক্ত,অশরীরি।
তিনি ইচ্ছা মাত্র সব কিছু করেন। ঈশ্বর আনন্দ স্বরুপ, তিনি রাগ,দ্বেষ থেকে মুক্ত। কাম,ক্রোধ,লোভ,মোহ, অহংকার তাকে লিপ্ত করতে পারে না। জ্ঞানিগন আনন্দস্বরুপ ঈশ্বরের উপাসনা করে আনন্দ প্রাপ্ত হন। ঈশ্বর সাকার নিরাকার এর অতীত কোন বস্তু। শুদ্ধ মন দ্বারা তাকে জানা সম্ভব। যেমনি ভাবে আমরা সুখ,দুঃখ মন দিয়ে অনুভব করি।
আত্মা যখন শরীর প্রাপ্ত হয় তখন সে সতন্ত্র ভাবে কার্য করে।দেহান্তে সেই কর্ম অনুসারে পরমাত্মা তাকে সুখ,দুঃখ তথা অন্য জন্ম প্রদান করে। পরবর্তী জন্মে সে স্বভাব অনুযায়ী কর্ম করে। যদি সে শরীর অবস্থায় আত্মা মন্দ কর্ম করে থাকে তাহলে সে নিম্ন যোনী প্রাপ্ত হয়। তখন তার মাঝে ভালো মন্দের বিচার থাকে না। নিম্ন যোনী প্রাপ্ত জীব ভোগ বিলাসে মত্ত থাকে।
কিন্তু মানব যোনীতে ভোগ আর কর্ম দুটোরেই মিশ্রন। । এই যোনীতে ভালো মন্দের বিচার সম্ভব এবং ঈশ্বর ভজনার উত্তম স্থান।
আমি আত্মা, শরীর নই। এই শরীর রুপ সংসার থেকে আত্মা ঈশ্বর ভজন করে ও সুখ দুঃখাদি ভোগ করে।

জীবাত্মা নয় স্ত্রী, নয় পুরুষ আর নয় নপুংসক। ইহা পূর্বজন্মে যেমন যেমন কর্ম করে, তেমন শরীর প্রাপ্ত হয় পরবর্তী জন্মে। (শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ্)
বর্তমানে মানুষ যেভাবে ধুপ,ধুনা, গন্ধ,খাবার,পশুবলি ইত্যাদি দিয়ে পূজা করেন সেটাকে পূজা বলা যায় না।
প্রকৃত পূজা হলো নিজ আত্মাকে পূর্ণ রুপে জাগরন করা। ঈশ্বরে আজ্ঞা পালন করা আর সত্য ও ন্যায়ের আচরন করা ইহাই ঈশ্বরের পূজা।

উপনিষদে মানুষের শরীর কে রথের সাথে তুলনা করা হয়েছে। আত্মা হচ্ছে সেই রথের মালিক, বুদ্ধি সারথি, মন লাগাম,ইন্দ্রিয় গুলো হলো অশ্বসমুহ। রথের সারথি যদি উত্তম না হন ঠিক ভাবে যদি লাগাম না ধরেন তাহলে অশ্বসমুহ বিপথে ধাবিত হয়। ঠিক তেমনি মনরুপ লাগাম সংযত না হলে ইন্দ্রিয় সমুহ বিপথে ধাবিত হয়,ঈশ্বর কে জানতে পারে না। তাই শুদ্ধ মনে ঈশ্বরের উপাসনা করতে হয়।
পরমাত্মা আমাদের মাতা,পিতা,মিত্র। তাই তার কাছে আমরা প্রার্থনা করব তিনি সকল প্রাণী কে সৎমার্গে প্রেরণ করুক।
ওম্ শান্তিঃ শান্তিঃ শান্তিঃ।
কৃষ্ণচন্দ্রগর্গজীর হিন্দি আর্টিকেল থেকে বাংলা অনুবাদ by বিকাশ মজুমদার

বেদে গৌরাঙ্গের কথা একটি ভ্রান্ত ধারণা।

বেদ নিয়ে যেন পৌরাণিকদের জল্পনা কল্পনার শেষ নেই। তারা তাদের কাল্পনিক চিন্তাধারা বেদের মধ্যে প্রতিফলিত করতে চায়। যেমনঃ রাম অবতার, কৃষ্ণ অবতার, কাল্পনিক রাধা চরিত্র ইত্যাদি। এমন কি বাদ যায় নি কলি যুগের নিমাই সন্ন্যাসি (গৌরাঙ্গ)। তাদের দাবী হচ্ছে, বেদে নাকি নিমাই (গৌর) এর ভবিষ্যত বাণী করা হয়েছে। এবং বলা হয়েছে তিনি না কি কীর্তন প্রচার করবেন। তারা নিম্নক্তো দাবী উপস্থাপন করে –

.

=>> দাবী -০১

সেমং নঃ স্তোমমা গহ্যুপেদং সবনং সুতম। গৌরো ন তৃষিতঃ পিব।।

(ঋগবেদ ১।১৬।৫)

.

হে ভগবান গৌর! সূর্যরশ্নি সম্মিলনা কাঙ্ক্ষী চন্দ্রের মতো তৃষিত এই ভক্তমন্ডলীর সমীপে আগমনপূর্বক দিব্য সংকীর্তনানন্দ আস্বাদন করুন।

.

দাবীর সত্যতাঃ

সম্পূর্ণ মনোকল্পিত অনুবাদ এটি।মহর্ষী যাস্কের মতে বেদ মন্ত্রের অনুবাদ মন্ত্রের প্রকরন এবং দেবতা অনুয়ায়ী করা উচিত। কিন্তু উক্ত অনুবাদে এর কোনটাই মানা হয় নি। অনুবাদক যেন তার মনের মাধুরি মিশিয়ে অনুবাদ করেছেন। যা কল্পনা ব্যতিত আর কিছুই নয়। যথার্থ অনুবাদ হচ্ছে –

.

” হে ইন্দ্রেদেব! আমাদের স্তোত্র শ্রবন করতে আপনি এখানে আসুন। তৃষ্ণার্থ গৌর মৃগের ন্যায় ব্যকুল মনে সোমের অভিষেক স্থানের নিকট এসে সোম পান করুন ”

.

উপরিউক্ত মন্ত্রে দেখা যাচ্ছে যে, ওখানে “গৌর মৃগের ” কথা বলা হয়েছে। নিমাই (গৌরাঙ্গদেব) এর কথা বলা হয় নি। মন্ত্রে গৌর একটি বর্ণ বিশেষ। এই গৌর শব্দের উল্লেখ আমরা যজুর্বেদ ১৩।৪৮ এ পাই-

” গৌরমারণ্যমনু তে দিশামি…….গৌরং তে শুগৃচ্ছতু যং দ্বিশস্তং শৃশুগচাছতু”

.

এর অনুবাদে বলা হয়েছে, তোমার শোক, সন্তাপ বা ক্রোধ গৌর মৃগের প্রাপ্ত হোক।

যদি এখানে আমরা গৌর = নিমাই (গৌরাঙ্গ) অর্থ করি তাহলে মন্ত্রটির অর্থ দাড়ায় –

“তোমার শোক, সন্তাপ বা ক্রোধ নিমাই(গৌর) এর প্রাপ্ত হোক”

এরকম অর্থ কি তারা স্বীকার করবেন?

সর্বাশ্চার্যের বিষয় এই যে পৌরাণিকদের শিরোমনি রমেশ দত্তও উক্ত মন্ত্রে নিমাই (গৌর) কে খুজে পান নি।

.

“হে ইন্দ্র! তুমি আমাদের স্তুতি গ্রহন করিতে আসো। যেহেতু যজ্ঞসবন অভিযুত হইয়াছে। তুমি তৃষিত গৌর মৃগের ন্যায় পান কর”

.

=>> দাবী – ০২

অগ্নেঃ পূর্ব্বে….বরুণং দুরমায় গৌরো ন ক্ষেপ্নোরবিজে জ্যায়া।।

(ঋগবেদ ১০।৫১।১৬)

.

আমি আমার পূর্বতন ব্রহ্মাদি ভ্রাতাদের মৃত্যু দর্শন করে মৃত্যভয়ে ভীত হয়ে বহু দেশ ভ্রমন করার পর মৃত্যুর লক্ষের বাইরে শ্রী গৌরদেবের চরন আশ্রয় করেছি – যা আশ্রয়ে নিরুদ্বেগ হওয়া যায়।

.

দাবীর সত্যতাঃ

এ মন্ত্রেও সেই একই কল্পনার আশ্রয়। তাদের যেন মন্ত্রে গৌর শব্দটি পেলেই হলো আর কিছুই দেখার প্রয়োজন নেই। মন্ত্রটিকে একেবারে চৈতন্য চরিতামৃত বানিয়ে ছাড়বে। মন্ত্রদ্রষ্টা ঋষিরা এরকমটি জানলে হয়তবা আগেই দেহত্যাগ করতেন।

মন্ত্রটির যথার্থ অনুবাদ-

.

“যেই প্রকারে রথী মার্গে গমন করে লক্ষ্যে পৌছে, এভাবে আমার তিন জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা এই যজন কার্য করতে গিয়ে মৃত্যু প্রাপ্ত হয়েছে। হে বরুনদেব! এই ভয়ে আমি চিন্তিত হয়ে সুদূরে চলে এসেছি। ধনুধারীর বাণ দ্বারা যেই প্রকারে হরিণ ভয়ে ভীত হয়, সেই প্রকারে আমি যজন কার্যে ভয়ে ভীত”

.

এই মন্ত্রেও গৌর= মৃগের কথা বলা হচ্ছে। নিমাই (গৌরাঙ্গ) এর কথা নয়। অতএব ব্যাখ্যা নিষ্প্রয়োজন। এবার রমেশ দত্তের অনুবাদে আসি। তিনি কি এই মন্ত্রে নিমাই(গৌরাঙ্গ) এর কথা স্বীকার করেছেন?

চলুন দেখে নেওয়া যাক-

.

” অগ্নির পূর্ব্বতন ভ্রাতাগন, যেমন রথী দূরপথ পর্যটনে প্রবৃত্ত হয়, তদরূপ এই কার্যে ব্রতী হইয়া বিষ্ট হইয়াছে। হে বরুন! এই নিমিত্ত ভয়প্রযুক্ত আমি দূরে চলিয়া আসিয়াছি। যেরূপ শ্বেত হরিণন ধনুকের গুন দেখিলে বাণের ভয় প্রাপ্ত হয়। তদ্রুপ আমিও উদ্বিগ্ন হইয়াছি”

.

অতএব দেখা যাচ্ছে যে, কোন অনুবাদকই উক্ত মন্ত্রগুলোতে নিমাই(গৌরাঙ্গ) এর কথা স্বীকার করেন নি। দাবীগুলো যে ভ্রান্ত ছিলো তাহা সুস্পষ্ট।

বেদ কি কলি যুগে প্রযোজ্য নয়?

বেদ সব যুগেই প্রযোজ্য

সমগ্র মহাবিশ্ব ধ্বংস বা পুনঃসৃষ্টি

হলেও বেদ সকল

কালের জন্য প্রযোজ্য ও সর্বদা

অপরিবর্তিত

থাকবে…।”” ঋগবেদ ১০/১৯০/১-৩ বেদ

সকল যুগ

ও কালের জন্য প্রযোজ্য।এর বাণী

কখনো

অপ্রাসঙ্গিক হয়না,অচল হয়না।বেদ

মন্ত্র কলিযুগে

নিষ্ক্রিয়-এ ধরনের প্রলাপ তাই

অনর্থক।সর্বযুগে ই

তা আধুনিক। অংতি সন্তং ন

জহাত্যন্তি সন্তং ন পশ্যতি।

দেবস্য পশ্য কাব্যং ন মমার ন

জীর্যতি। অথর্ববেদ

১০.৮.৩২ অংতি সন্তম্- সমপিবর্ত্তী

পরমাত্মাকে,ন

পশ্যতি- দেখেনা,ন জহাতি-বর্জিত

হয়না,দেবস্য

কাব্যম- ঈশ্বরের বানী বেদকে,পশ্য-

দেখ, ন

মমার-অচল হয়না,ন জীর্যতি-

অপ্রাসঙ্গিক

হয়না,জীর্ন হয়না। অর্থাত্,মনুষ্য

সমীপবর্ত্তী

পরমাত্মাকে দেখেও না আবার

তাহাকে ছাড়িতেও

পারেনা। পরমাত্মার বানী বেদকে

দেখ,কখনও

অচল হয়না,কখনও অপ্রাসঙ্গিক বা

জীর্ন হয়না ১/৮৫

“চারযুগে(সত্য,ত্রেতা,

দ্বাপর,কলি)দায়িত্বের

রকমভেদ রয়েছে কারন প্রতি যুগে

মানুষের আয়ু

হ্রাস পাচ্ছে” ১/৮৬ “”সত্য যুগে

তপস্যা, ত্রেতায়

জ্ঞান, দ্বাপর এ যজ্ঞাদি ও

কলিতে দান ই শ্রেষ্ঠ

ধর্ম।’ (যদিও অনেক

অপপ্রচারকারীরাই বলেন

কলিতে নাকি হরিনাম ই একমাত্র

ধর্ম!!!) ১/৮৭ “কিন্তু

মহাবিশ্বের ভারসাম্য রক্ষার্থে

সবসময় ই চার

ধরনের পেশা ভাগ করা হয়েছে”

১/৮৮ “ব্রাক্ষ্মনরা

নিজ স্বার্থত্যগ করে কাজ

করবে,বেদ পরবেএবং

তা অপরকে শেখাবে” ১/৮৯

“ক্ষত্রিয়রা বেদ

পরবে,লোকরক্ষা ও

রাজ্যপরিচালনায় নিযুক্ত

থাকবে” ১/৯০ “বৈশ্যরা বেদ

পরবে,ব্যবসা

ওকৃষিকর্মে নিজেদের

নিযুক্তকরবে” ১/৯১

“শুদ্ররা বেদ পাঠ করবে এবং

সেবামুলক

কর্মকান্ডে নিযুক্ত থাকবে” “আমি

মানবকল্যানে যে

বাণী তোমাদের দিয়েছি তা

প্রচার কর ব্রাক্ষ্মন

ক্ষত্রিয় বৈশ্য শুদ্র নারী পুরুষ পাপী

পুন্যাত্মা

নির্বিশেষে সকলকে” যজুর্বেদ ২৬/২

গত

কয়েকশবছর এ,যখন বেদজ্ঞান এর

অভাব কে

কাজে লাগিয়ে স্বার্থান্বেষী

ধর্মব্যবসায়ী ও

তথাকথিত ব্রাহ্মন পরিচয় ধারী

যারা কিনা দস্যু থেকেও

অধম তারা তৈরী করেছিল

অস্পৃশ্যতা নামক জঘন্য

প্রথা।একসঙ্গে খাওয়া দাওয়া তো

দুরের

কথা,অনেকেই একে অপরকে

নিজেদের

বানানো ছোট জাত বিবেচনা করে

ছুঁতও না।অথচ

পবিত্র বেদ বলেছে- সমানী প্রপা

সহ

বোরন্নভাগঃ সমানে যোক্তো সহ

বো যুনজমি।

সমঞ্চোহগ্নিং যপর্যতারা নাভি

মিবাভিতঃ।। অথর্ববেদ

৩.৩০.৬ বঃ-তোমাদের,পপা-

পান,সমানী-একসঙ্গে

একপাত্রে হউক,বঃ অন্নভাগাঃ-

তোমাদের আহারও

একসাথে হউক,বঃ-তোমাদিঘে,সহ-

সঙ্গে,সমানে

যোক্ত্রে-এক বন্ধনে,যুনজমি-যুক্ত

করেছি,সম্যন্চঃ-সবাই

মিলে,অগ্নিং সপর্যত-একসাথে

উপাসনা কর(যজ্ঞাদি,ধ্যন),ইব-

যেমন,অরাং নাভিং অভিত-

যেমন করে রথচক্রের চারপাশে অর

থাকে।

অর্থাত্,হে মনুষ্যগন তোমাদের

ভোজন ও আহার

হোক একসাথে,একপাত্রে,

তোমাদের

সকলকে এক পবিত্র বন্ধনে যুক্ত

করেছি,তোমরা সকলে এক হয়ে

পরমাত্মার উপাসনা

(যজ্ঞাদি,ধ্যন) কর ঠিক যেমন করে

রথচক্রের

চারদিকে অর থাকে!

ন্যায় দর্শন 2./1/69 মুণ্ডক ঊপনিষদ

2/1/4 ,

2/1/6 ,নিরুক্ত 1/18 , যোগ দর্শন

1/26 , বৈশেষিক

1/1/3 বেদান্ত সুত্র 1/1/3 , 1/3/29

মনুসংহিতা

12/95-96 বেদের সর্বকালীন

গ্রাহ্যতা ও

প্রামাণিকতা স্বীকার করে |