যজ্ঞাদি কর্ম অধ্বর অর্থ্যাৎ অহিংসা কর্ম।

মহাভারত কালে এই বৃত্তান্ত এসেছে যে,
“যজ্ঞে হিংসার নিন্দা এবং অহিংসার প্রশংসা”
এই বৃত্তান্ত মহাভারতের শান্তিপর্বের অন্তর্গত ২৭২ অধ্যায়ে এসেছে। এখানে বলা হয়েছে যে, যদি কেউ যজ্ঞের মধ্যে পশু বধ করে, তবে নিশ্চয় তার সমস্ত তপ নষ্ট হয়ে যাবে।
.
তস্য তেনানুভাবেন মৃগহিংসাত্মনস্তদা।
তপো মহৎ সমুচ্ছিন্ন তস্মাদহিংসা ন যজ্ঞিয়া।।
অহিংসা সকলো ধর্মাহিংসা ধর্মস্তথাবিধঃ।
সত্যংতেহং প্রবক্ষামি, যো ধর্মঃ সত্যবাদিনাম।।
.
এই প্রকরেন মহারাজ যুধিষ্ঠির পিতামহ ভীষ্ম কে জিজ্ঞেস করছেন যে,
ধর্ম তথা সুখের জন্য যজ্ঞ কিভাবে করা উচিত?
ইহার উত্তরে পিতামহ এক তপস্বী ব্রাহ্মন ব্রাহ্মণী দম্পতির বৃত্তান্ত দিয়ে বললেন যে,
সেই তপস্বী ব্রাহ্মণের মহান তপ যজ্ঞের মধ্যে পশুবলি দেবার জন্য এক বণ্য মৃগ বধ করার ইচ্ছা মাত্র সমস্ত বিনষ্ট হয়ে গিয়েছিলো।
এইজন্য যজ্ঞের মধ্যে কখনো হিংসা করা উচিৎ নয়। অহিংসা সার্বত্রিক এবং সর্বকালীন নিত্য ধর্ম।
.
এই প্রমাণ দ্বারা জানা যায় যে, মহাভারত কালে পশু হিংসার বিধান ছিলো না।
এমনকি এর পূর্বেও পবিত্র বেদে এ প্রকরন এসেছে-
.
রাজসুয়ং বাজপেয়মগ্নিষ্টোমস্ত­দধ্বরঃ।
অকাশ্বমেধাবৃচ্ছিষ্টে জীব বর্হিমমন্দিতমঃ।।
(অথর্ববেদ ১১।৭।৭)
.
রাজসূয়, বাজপেয়,অগ্নিষ্টোম, অশ্বমেধ আদি সব যজ্ঞ অধ্বরঃ অর্থাৎ হিংসা রহিত যজ্ঞ। যাহা প্রাণীমাত্রকে বৃদ্ধি এবং সুখ শান্তি দাতা।
.
এই মন্ত্রে রাজসূয় আদি সব যজ্ঞকে অধ্বরঃ বলে গিয়েছেন। যার একমাত্র সর্ব্বসম্মত অর্থ হিংসা রহিত যজ্ঞ।
.
তাহলে ইহা স্পষ্ট যে, বেদের মধ্যে কোন যজ্ঞে পশুবধের আজ্ঞা নেই। তবুও বেদের নাম নিয়ে যজ্ঞে পশু বধ করা মানে নিজেকে ধোকা দেওয়া এবং নিজের অজ্ঞানতাকে প্রকাশ করা।
আবার ইহা দেখ যে, পশু বধ করে প্রাণীমাত্রের কিরকম বৃদ্ধি হচ্ছে? এবং মানুষ কি রকম সুখ প্রাপ্ত হচ্ছে?
পরন্ত প্রাণীহত্যা করার সময় তার ঘোর যাতনা প্রাপ্ত হয় এবং তার জীবনের সমাপ্তি ঘটে।
.
তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, ইতিহাসও পশুবলির সমর্থন করে নি। এমন কি বেদও। কিন্তু কিছু মূর্খ যাজ্ঞিক( পৌরাণিক) লোক ” বৈদিকী হিংসা হিংসা ন ভবতি” এর ঢোল পিটিয়ে যজ্ঞে পশুবধ কে অহিংসার সঙ্গা দিয়ে স্বর্গের মার্গ কে প্রশস্ত করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে।
.
এদের বিচার দেখে মনে যে,নিশ্চয় এরা তাদের বুদ্ধি ঘাসক্ষেতে রেখে এসেছিলেন। নতুবা এরকম অর্থ তারা করতো না।
” বৈদিকী হিংসা হিংসা ন ভবতি” এর অর্থে মনু মহারাজ কি বলেছেন দেখুন-
.
যা বেদবিহিতা হিংসা নিয়তাস্মিংশ্চরাচরে।
অহিংসামেব তাং বিদ্যাদ্বেদাদ ধর্মো হি নির্ব্বভৌ।।
যো হিংসকানি ভুতানি হিনস্ত্যান্তসুখেচ্ছয়া।
স জীবংশ্চ মৃতশ্চৈব, নকশ্চিক সুখমেধতে।।
(মনুস্মৃতি ৫।৪৪- ৪৫)
.
অর্থাৎ বেদে বিশ্ব সংসার মধ্যে দুষ্ট আততায়ী, ক্রুর পাপীকে দন্ড দান রূপ হিংসা বিহিত আছে তাহা অহিংসাই জানবে। কারন বেদ দ্বারাই যথার্থ ধর্মের প্রকাশ হয়।
কিন্তু ইহার বিপরীতে যে নিরপরাধ,অহিংস প্রাণীকে নিজ সুখ প্রাপ্তির জন্য হত্যা করে সে জীবিত অথবা মৃত এই দুই অবস্থায় কখনোই সুখ পায় না।
.
দুষ্টকে দন্ড প্রদান করা হিংসা নয় পরন্ত অহিংসারূপ পূণ্য তাহা মনুস্মৃতি ৮।৩৫১ এ স্পষ্ট আছে-
.
” নাততায়িবধে দোষো হন্তুর্ভবতি কশ্চন”
অর্থাৎ আততায়ি ( যে ব্যক্তি বধ উদ্যত) তাহাকে বধ করিলে কোন দোষ নেই।

তাহলে উপরিউক্ত আলোচনা থেকে স্পষ্ট হয় যে যজ্ঞে পশু বধ নিষিদ্ধ। যে বেদ পশু পালনের সুস্পষ্ট নির্দেশ দেয়। সে বেদ পশু হত্যার বিধান কি করে দিতে পারে?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *