ম্যাকলের কুটিল শিক্ষা নীতির কারনেই অনেক ভারতীয় বিদ্বান ইহা মানে যে, বেদের মধ্যে কথিত আর্য এবং দস্যুদের সংঘর্ষের বর্ননা রয়েছে। আর্যরা মধ্য এশিয়া থেকে এসেছে। ভারতের মূল নিবাসী দাস বা দস্যু ছিলো, যাদের আর্যরা এসে পরাজিত করে দাস বানিয়েছে। কঠোর ব্যবহার করে তাদের নিচু কাজ করিয়ে এবং সর্বদার জন্য ভারতবর্ষের উপর আধিপত্য স্থাপন করেছেন। এবং এই দেশের সত্যনাশ করার ষড়যন্ত্রের শামিল অনেক সাম্যবাদি ইহাই বলে যে, আর্যরা নিজ মহত্বকে জন্মগত ভেদভাবের আধারের উপর প্রতিস্থাপিত করেছেন। ভারতবর্ষকে বিভাজিত কারী এই বিচারের কারনে আজ স্বয়ং কে দ্রবিড় তথা দলিত ভাই- বোন যে নিজেকে নিজে অনার্য মানে।তাদের মনে বেদের প্রতি ঘৃণা এবং দ্বেষের বিষ ভরে গেছে। ডাঃ আম্বেডকার ও তাদের এই বিচারে সহমত ছিলো না। কারন এই মিথ্যা বিবাদ বেদের উপর আরোপ করা হয়েছে। এখান থেকে আর্য আক্রমন তত্ত্বের মিথ্যাচারের গল্পটি পড়ুন-
http://www.agniveerbangla.com/Aryan%20Invasion%20is%20False.html
অতএব এখন দেখার বিষয় বেদের মধ্যে আর্য এবং দস্যুর বাস্তবিক অর্থ কি?
মূলত ইহাই এই লেখার মূল উদেশ্য।
.
=>> আরোপঃ বেদের মধ্যে অনেক স্থানে আর্য এবং দস্যুদের বর্ণনা রয়েছে। অনেক মন্ত্রে দস্যুদের বিনাশ তথা আর্যের রক্ষার জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে। কিছু মন্ত্রে তো ইহা বলা হয়েছে যে, স্ত্রী যদি দস্যু হয় তবে তাকেও নিষ্কৃতি দেওয়া উচিত নয়। এ থেকে জানা যায় যে, বেদের মধ্যে দস্যুদের উপর আর্যের অত্যন্ত ঘাতক আক্রমনের বর্ণনা রয়েছে।
.
=>> সমাধানঃ-
ঋগবেদের মধ্যে দস্যু সংশ্লিষ্ট ৮৫ টি মন্ত্র রয়েছে। এর মধ্যে কিছু মন্ত্র আমরা পর্যালোচনা করবো-
=> হে শূরবীর রাজন! বিবিধ শক্তিযুক্ত আপনি একাকি বিচরন করে নিজ শক্তিশালী অস্ত্র দ্বারা ধনিক দস্যু (অপরাধী) এবং সনকঃ ( অধর্ম দ্বারা অন্যের ধন ছিনতাইকারী) কে বধ করুন। আপনার অস্ত্র দ্বারা তাহার মৃত্যু প্রাপ্ত হোক।
(ঋগবেদ ১।৩৩।৪)
.
এখানো “সতকঃ” শুভ কর্ম রহিত। এবং দস্যুর জন্য “অয়জ্ব” বিশেষন এসেছে অর্থাৎ যে সৎকর্ম রহিত। এবং ওইরূপ ব্যক্তিই পাপকারী ও অপরাধী হয়। অতএব এখানে রাজা প্রজার রক্ষার জন্য ঐ রূপ লোককে বধ করার জন্য বলছেন। সায়ন এই মন্ত্রে দস্যু শব্দের অর্থ চোর করেছেন। দস্যু শব্দটি “দস” ধাতু থেকে এসেছে যার অর্থ ” উপক্ষয়া”যে নাশ করে। অতএবঃ দস্যু কোন আলাদা জাতি নয়। পরন্তু দস্যু শব্দের অর্থ বিনাশকারী এবং অপরাধী প্রকৃতির লোক।
.
=>> যে দস্যু (দুষ্ট জন) শুভ কর্ম রহিত ও শুভকারীর সাথে দ্বেষ রাখে, আপনার রক্ষার প্রতাপ দ্বারা সে দূরে যাক। হে পরাক্রমী রাজেন্দ্র! আপনি সব স্থানে “অব্রত” (শুভ কর্ম রহিত) জন কে বাহিরে দূর করুন।
(ঋগবেদ ১।৩৩।৫)
.
এখানেও দস্যুর বিশেষন এসেছে “অয়জ্ব”( শুভ কর্ম রহিত এবং “অব্রতঃ (নিয়ম অপলানকারী তথা অনাচারী। পরিষ্কার যে, দস্যু শব্দ অপরাধীর জন্য এসেছে এবং সভ্য সমাজে ঈশ্বর ঐ সব লোক কে দন্ডের বিধান দিয়েছে।
.
=>> হে বীর রাজন! এই রোদনরত বা হাস্যরত দস্যু কে এই লোক থেকে দূর করে দিন এবং তাকে নষ্ট করে দিন। তথা যে শুভ কর্মযুক্ত তথা ঈশ্বরের গুনগান কারী মানুষ তাকে রক্ষা করুন।
(ঋগবেদ ১।৩৩।৭)
.
=>> হে রাজেন্দ্র! আপনি নিজের দক্ষতা দ্বারা কম্পনযুক্ত “অয়জ্বা , অব্রতী ” দস্যুকে কম্পায়মান করুন। যে প্রত্যেক বস্তুর উপভোগ কেবল স্বয়ং এর জন্য করে সেই দুষ্ট কে দূর করুন। হে মানুষের রক্ষক! আপনি উপদ্রব, অশান্তি উৎপন্নকারী দস্যুর নগর কে নষ্ট করুন।
(ঋগবেদ ১।৫১।৫)
.
এই মন্ত্রে দান পরোপকার রহিত, সবকিছু স্বয়ং ব্যায়কারী কে দস্যু বলা হয়েছে। কৌষিতকী ব্রাহ্মণে ঐ সব লোক কে অসুর বলা হয়েছে। অতএব দস্যু এবং অসুর দুইএর তাৎপর্য দুষ্ট অপরাধী।
.
=>> পরমেশ্বর আপনি আর্য ও দস্যুকে উত্তম প্রকারে জানেন। শুভ কর্মকারীর জন্য আপনি অব্রতী (শুভ কর্মের বিরোধী) দস্যুকে নষ্ট করুন। হে ভগবন! আমি উত্তম কর্মের প্রতি পালনের জন্য আপনার প্রেরনা সদা প্রার্থনা করি।
(ঋগবেদ ১।৫১।৭)
.
=>> হে রাজেন্দ্র! আপনি নিয়মের পালনকারী তথা শুভকর্ম কারীর কল্যান হেতু ব্রতরহিত দস্যুকে সংহার করুন। স্তুতি কারীর সাথে দ্বেষ রাখা,অনাচারী ঈশ্বরের গুনগান রহিত লোক কে বশে রাখুন।
(ঋগবেদ ১।৫১।৯)
.
=>> হে পরম ঈশ্বর্যবার রাজা! আপনি তিন প্রকারে সাধারন,স্পর্ধা ও সুখ কে বৃদ্ধির জন্য সংগ্রাম মধ্যে যজমানস্ আর্যম( উত্তম,গুন ও স্বভাব লোক) কে রক্ষা করুন। এবং অব্রতান্ (দুষ্ট আচরনকারী) যার অন্তঃকরন মলিন হয়ে গেছে। হিংসারত ও হিংসা ইচ্ছাকারী কে নষ্ট করুন।
(ঋগবেদ ১।১৩০।৮)
.
এখানে কৃষ্ণ ত্বক শব্দটি এসেছে যার অর্থ অন্তঃকরনের দুষ্ট ভাব। এবং সাথে তনৃষাণাম এবং অর্শসানম শব্দ এসেছে। যার অর্থ হিংসা করতে চায় বা হিংসা রত। ইহার বিপরীত শব্দ আর্য এখানে শ্রেষ্ঠ এবং পরোপকারী মানুষের জন্য এসেছে।
.
অতএব উত্তম স্বভাববান শান্তিপ্রিয়, পরোপকারী কে আর্য তথা অনাচারী এবং অপরাধী প্রবৃত্তিবান কে দস্যু বলে। ঋগবেদ ৬।২২।১০ এ আমাদের দাসকেও আর্য বানানোর শিক্ষা দেয়। পরিষ্কার যে আর্য ও দস্যু একটি ব্যক্তির গুনবাচক নাম কোন জাতিবাচক নাম নয়।
ঋগবেদ ৩।৩০।২৭ তথা ৭।১০৪।২ মন্ত্রে ব্রহ্মদ্বেষী, নরভক্ষক এবং কুটিল লোককে যুদ্ধের দ্বারা বশ রাখতে বলেছেন। ব্রহ্মদ্বেষী, নরভক্ষক এবং কুটিল লোক ও কোন আলাদা জাতি নয়। অপরাধী প্রবৃত্তির লোক কে দাস,দস্যু এবং ব্রহ্মদ্বেষী বলে।
বিদ্বান ব্যক্তিরা ইহা জানে যে, সৎ (সত্য) এবং অসৎ (অসত্য) পরস্পর সংঘর্ষ করতেই থাকে। সৎ অসৎ কে এবং অসৎ সৎ কে সর্বদা বশে রাখার চেষ্টা করে। এই দুই এর মধ্যে যে সৎ এবং ঋত (শাশ্বত সত্য) তাহকেই ঈশ্বর সদা রক্ষা করেন। এবং অসৎ কে হনন করেন।
তাই আসুন মিথ্যা অভিমান ত্যাগ করে ফিরে আসি ঋত ঋদ্ধির পথে।
Category Archives: Bangla
অর্জুনের রথের ধ্বজায় কি হনুমানজী বিদ্যমান ছিলেন?
কিছু কিছু পৌরাণিক পন্ডিত দাবী করে অর্জুনের রথের ধ্বজায়(পতাকায়) নাকি স্বয়ং হনুমানজী ( ত্রেতা যুগের ) বিদ্যমান ছিলেন।
অর্জুনের রথের পতাকায় স্বয়ং হনুমানজী ছিলেন একথা মহাভারতে কোথাও বলা নেই।
যেমন আজকের অত্যাধুনিক মিসাইল, যুদ্ধবিমান ইত্যাদিতে পরিচয় বোধক বিভিন্ন চিহ্ন ব্যবহার করা হয়। রাষ্টের ধ্বজা সেনাদের সমন্ধ বিভাগ করে। তাই সেনাদের চিহ্নিত করার জন্য বিভিন্ন প্রতীক ব্যবহার করা হয়। (কেউ কেউ সেনাদের পোশাক ভিন্নতা করে নিজ সৈন্য চিহ্নিত করার জন্য)
এই প্রকারে অর্জুনের রথে অনেক অনেক মহাপুরুষ, বীর যোদ্ধা, আর শ্রদ্ধেয় পুরুষদের ছবি অংকিত ছিলো। এগুলো ছিলো সম্মান আর সাহসের প্রতীক।
যারা বলে থাকে অর্জুনের রথে কেবল হনুমানজীর মূর্ত্তি ছিলো তারা যেন দয়া করে মহাভারতের
( উদ্যোগপর্বান্তর্গত যানসন্ধি পর্বের অধ্যায় ৫৬ এর ৭এবং ৮ সংখ্যক শ্লোক পরে দেখেন।)
সঞ্জয় উবাচ – প্রজানাথ! বিশ্বকর্মা ত্বষ্টা তথা প্রজাপতি ইন্দ্রের সাথে মিলে অর্জুনের রথের ধ্বজায় অনেক প্রকার রূপ তৈরী করেছেন। ৭
সেই তিন জন দেবমায়ার দ্বারা সেই ধ্বজা মধ্যে ছোট বড় অনেক প্রকার বহুমূল্য এবং দিব্য মূর্তিকে নির্মাণ করেছেন। ৮
এই শ্লোকেই স্পষ্ট প্রমান দেয় অর্জুনের ধ্বজার বর্ণন। এখানে কেবল হনুমানের কথা বলা হয় নি। ওখানে অনেক রাজা, বীর,মহাপুরুষ দের ছবিও ছিলো। একথা সত্য যে তার মধ্যে হনুমানজীর ছবিও অংকিত ছিলো।
কিন্তু কিছু পৌরাণিক বন্ধুগণ ধু সেখানে কেবল হনুমানজীকেই দেখতে পান। তারা মনেহয় এটা জানত না যে, সেখানে যোগেশ্বর স্বয়ং উপস্থিত ছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ যেমন মহাবীর,বুদ্ধিমান আর জ্ঞানগম্ভীর চিন্তাধারার ছিলেন তেমনি ছিলেন পক্ষপাত শুন্য ব্যক্তি। তিনি কিকরে সেখানে কেবল হনুমানজীর ছবি দিতে দিতেন। এতে বাকি বীর মহাপুরুষ দের অপমান করা হতো না? তাছাড়া মহাভারতে তো বলাই আছে সেখানে অনেকের ছবি অংকিত ছিলো।
এক শ্রেণীর পৌরাণিক দের দাবী হনুমানজী নাকি সর্বদাই প্রভু শ্রী রামচন্দের চরণে সেবা করতেন,
আর এক শ্রেণীরর দাবি শ্রীরামচন্দ্র নাকি শ্রীকৃষ্ণ হয়ে জন্ম নিয়েছেন।
ফির সন্দেহের বিষয় যদি তাই হতো তাহলে যে ভক্ত তার প্রভূর চরণ ছাড়া বুঝত না সে কি করে প্রভুর মাথার উপরে উঠবে। এতে প্রভুর অপমান হবে না কি?
পৌরাণিক দের এই তর্ক কি করে শেষ হবে।
আসা করি এই পোষ্ট প্রকৃত সত্য জানতে সাহায্য করবে।
মনুস্মৃতি ও দন্ডব্যবস্থা।
মনুস্মৃতি ন্যায় ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় একটি পুস্তক। একটি রাজ্য শাসন এবং পরিচালনা করার জন্য কতগুলো নির্দিষ্ট আইন থাকে। তন্মধ্যে একটি হচ্ছে অন্যায়কারীদের উপযুক্ত দন্ড প্রদান করা। মহর্ষি মনু মহারাজ তার বচনে সমাজ ব্যবস্থা এবং অপরাধীদের শিক্ষা দেবার জন্য কিছু দন্ড বিধান প্রণয়ন করেছেন। বিদ্যা, জ্ঞান ও সংস্কার দ্বারা দ্বিতীয় জন্ম প্রাপ্ত হওয়া দ্বিজ অথবা ব্রাহ্মণ কে মনু অধিক সম্মান প্রদান করেছেন।
[ এখানে উল্লেখ্য যে, জন্মগত ভাবে কেউ ব্রাহ্মণ বা দ্বিজ হয় না। ইহা সংস্কার এবং শিক্ষা সাপেক্ষ]
এরূপ উচ্চজ্ঞানসম্পন্ন বিদ্বান লোক অধিক সামর্থবান হয় এবং সমাজের কল্যাণ আনয়ন করে। অতঃপর সেও যদি নিজ দায়িত্ব পালন না করে এবং স্বধর্ম হতে বিচ্যুত হয় তবে অবশ্যই সেও দন্ডভাগী হবে।
নিম্নে এরূপ কিছু শ্লোক প্রস্তুত করা হয়েছে-
.
=>> স্বধর্ম হতে বিচ্যুত মাতা, পিতা, আচার্য্য আদি সবাই রাজা কর্তৃক দন্ডনীয় হবে-
.
পিতাচার্য্য সুহৃন্মাতা ভার্য্যা পুত্রঃ পুরোহিতঃ।
নাদন্ড্যো নাম রাজোহস্তি যঃ স্বধর্মে ন তিষ্ঠতি।।৩৩৫
.
পদার্থঃ (পিতা আচার্য সুহৃত মাতা ভার্যা পুত্রঃ পুরোহিত) পিতা, আচার্য, স্ত্রী, মাতা পুত্র এবং পুরোহিত কেউ হোক না কেন (যঃ স্বধর্ম ন তিষ্ঠতি) যে স্বধর্মে স্থিত নয় (রাজঃ অদন্ডমঃ নাম ন) রাজা তাদের যথোচিত দন্ড প্রদান করবেন।
(বিশুদ্ধ মনুস্মৃতি ৮।৩৩৫, ডঃ সুরেন্দ্রকুমার)
.
=>> অপরাধী রাজা সাধারনের চেয়ে অধিক সহস্রগুন দন্ড প্রাপ্ত হবে-
.
কার্ষপনং ভবেদ্দন্ড্যো যত্রান্যঃ প্রাকৃতো জনঃ।
তত্র রাজা ভবেদ্দন্ডঃ সহস্রমিতি ধারনা।।৩৩৬
.
পদার্থঃ (যত্র) যেই অপরাধে (অন্যঃ প্রাকৃতঃ জন) সাধারন মানুষের উপর (কার্ষপনং দন্ডদ্য, ভবেত) এক পণ দন্ড দেওয়া হয় (তত্র) সেই অপরাধে (রাজা, সহস্রং দন্ডদ্য, ভবেত) রাজা সহস্র পণ দন্ড প্রাপ্ত হবে।
(বিশুদ্ধ মনুস্মৃতি ৮।৩৩৬, ডঃ সুরেন্দ্রকুমার)
.
=>>উচ্চবর্ণের ব্যক্তি বর্গ অধিক দন্ড প্রাপ্ত হবে-
.
অষ্টাপদ্যন্ত শুদ্রস্য স্তেয়ে ভবতি কিল্বিষম্।
ষোড়শৈব তু বৈশ্যেষ্য দ্বাত্রিংশৎ ক্ষতিয়স্য চ।।৩৩৭
ব্রাহ্মণস্য চতুঃষষ্টিঃ পূর্ণং ব্যাপি শতং ভবেৎ।
দ্বিগুনা বা চতুঃষষ্টিস্তদ্দোষগুনবিদ্ধি সঃ।।৩৩৮
.
পদার্থঃ এভাবে (তত দোষগুণাবিত হি সঃ) যে কিছু বিবেকী হয়েও (স্তেয়ে) চুরি করে (শুদ্রস্য তু অষ্টাপাদ্যম) শুদ্রকে সেই চুরির কারনে আট গুন (বৈশ্যস্য তু ষোড়শ+এব) বৈশকে যোল গুন (ক্ষত্রিয়স্য দ্বাত্রিংশত) ক্ষত্রিয়কে বত্রিশ গুন (ব্রাহ্মণস্য চতুঃষষ্টি) ব্রাহ্মণকে চৌষষ্টি গুন (অপি বা শতম) বা শত গুন (বা) অথবা (দ্বিগুন চতুঃষষ্টি) একশত আটাইষ গুন (কিত্বিবর্ষং ভবতি) দন্ড হওয়া উচিত। অর্থাৎ যার যেমন জ্ঞান এবং যার প্রতিষ্ঠা অধিক, সেই অপরাধে সেইরূপ অধিক দন্ড প্রাপ্ত হবে।
(বিশুদ্ধ মনুস্মৃতি ৮।৩৩৭-৩৩৮, ডঃ সুরেন্দ্রকুমার)
.
=>> উপযুক্ত দন্ড প্রদান করে রাজা যশ এবং সুখ লাভ করবে-
.
অনেন বিধিনা রাজা কুর্ব্বাণঃ স্তেননিগ্রহম্।
যশোহস্মিন পাপ্তয়াল্লোকে প্রেত্য চানুত্তমংসুখম।।৩৪৩
.
পদার্থঃ (রাজা) রাজা (অনেন বিধিনা) উপরক্ত বিধি দ্বারা (স্তেননিগ্রহং কুর্বণিঃ) চোরকে নিয়ন্ত্রিত এবং দন্ডিত করে (অস্মিন্ লোকে যশঃ) এই জন্মে বা লোকমধ্যে যশ (চ) এবং (প্রেত্য) পরজন্মে (অনুত্তমং সুখম) উত্তম কে (প্রাপ্তুযাত) সুখ কে প্রাপ্ত করে।
(বিশুদ্ধ মনুস্মৃতি ৮।৩৪৩, ডঃ সুরেন্দ্রকুমার)
.
অতএব মহর্ষি মনুর বচন অনুযায়ী অপরাধীর পদ অনুসারে তার দন্ড নির্ধারিত হবে। মনু মহারাজ ব্রাহ্মণকে এবং উচ্চ শাসক কে কঠোরতম দন্ডের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। কিন্তু সমাজে দেখা যায় তার উল্টো। উচ্চ প্রভাবশালী বর্ণ যদি আপন কর্তব্যবিমুঢ হয় এবং নিন্দনীয় কার্যও করেন তবুও তার দন্ড অতন্ত্য লঘু হয়।
মনুঃ ৭।১৭-২০ এ স্পষ্ট বলা আছে, দন্ডই ন্যায়ের প্রচারক এবং দন্ডই অনুশাসনকর্তা। চার বর্ণ এবং জীবনের চার আশ্রমের রক্ষক। ইহা রাষ্ট্রকে জাগৃত রাখে। এইজন্য বিদ্বানরা দন্ডকে ধর্ম বলেন।