নমস্কার কি?

একজন বৈদিক তথা সনাতন হিন্দু
ধর্মালম্বী ব্যক্তির অন্যতম
একটি বৈশিষ্ঠ্য হল
কারো সাথে দেখা হলে কড়জোড়ে
তাকে নমস্কার প্রদান করে অভিবাদন
বা সম্মান জানানো।
কিন্তু হিন্দুসমাজ মানেই হল
ধর্মগ্রন্থকে বুড়ো আঙ্গুল
দেখিয়ে নিজে নিজে নতুন নিয়ম
বানানো,ঐক্য আমাদের পছন্দ
নয়,অযাচিত বিভেদেই আমাদের
আসক্তি।আর এই সুত্র ধরেই
অনেকে বিশেষত নির্দিষ্ট কিছু
সংগঠনের সদস্যরা সার্বজনীন
এবং পবিত্র বেদাদি কর্তৃক
অনুমোদিত,সকল প্রাচীন ঋষি-
মহাঋষিসহ আমাদের সকল পূর্বপুরুষদের
ব্যবহৃত সম্বোধন ‘নমস্কার’
না বলে ‘হরে কৃষ্ণ’,’জয় রামজীকি’
ইত্যাদি ব্যবহার করা শুরু করেছেন।শুধু
তাই নয়,তাদের অনেকেই
উল্টো নমস্কার প্রদানকারী সাধারন
হিন্দুদেরকে জিজ্ঞেস
করছেন,”আপনারা কেন নমস্কার দেন?
হরে কৃষ্ণ দেয়া ই ভাল!”
প্রথমেই জেনে নেই নমস্কার
সম্বন্ধে কিছু তথ্য।
বৈদিক শাস্ত্রে ‘মুদ্রা’ হল হাতের
বা দেহের বিশেষ একটি অবস্থান।
নাট্যশাস্ত্রে ২৪ প্রকার মুদ্রার
বর্ননা করা হয়েছে।দুই হাত জোড় করার
এই বিশেষ মুদ্রাটির নাম
হল ‘অঞ্জলী মুদ্রা’।
এটির দুটো ব্যবহার-১)কাউকে দেখলে
অভিবাদন জানাতে যখন এটি ব্যবহার
করা হয় তখন একে বলা হয় নমস্কার।
২)বৈদিক সান্ধ্য উপাসনার শেষ
ধাপে যখন ঈশ্বরকে উদ্দেশ্য করে এই
মুদ্রা করা হয় তখন একে বলে প্রনাম-
আসন।
মূলত শব্দটি হল ‘নমস্তে’ যার
বাংলা রুপ হল নমস্কার। ‘নম’ শব্দের
অর্থ হল নত হওয়া বা শ্রদ্ধা/সম্মান
প্রদর্শন করা যার সাথে ‘তে’ ধাতু যুক্ত
হয় যার অর্থ তোমাকে অর্থাত্
নমস্তে অর্থ হল তোমার প্রতি রইল
শ্রদ্ধা।
ভারতের বিভিন্ন প্রাচীন
মন্দিরে এবং প্রত্নতাত্তিক
নিদর্শনে শ্রীকৃষ্ণ,শ্রীরামচন্দ্র সহ
বিভিন্ন ব্যক্তিত্ত্বের নমস্কাররত
অবস্থায় খচিত নকশা পাওয়া যায়।
আপস্তম্ব ও বৌধায়ন সুত্রেও
অভিবাদনের নিয়ম হিসেবে নমস্কার
দেবার কথা পাওয়া যায়।
পবিত্র বেদে অনেকবার ই
নমস্তে তথা নমস্কার প্রদানের
উল্লেখ পাওয়া যায়।
পবিত্র বেদে অনেকবার ই
নমস্তে তথা নমস্কার প্রদানের
উল্লেখ পাওয়া যায়।
নমস্তে স্ত্বায়তে নমো অস্তু পরায়তে।
নমস্তে রুদ্র তিষ্ঠতে আসীনাযোত
তে নমঃ।।(অথর্ববেদ ১১.২.১৫)
অনুবাদ-নমস্কার তোমায়(কেননা)
আমাদেরকে দেয়া চৈতন্যের
জন্য,হে রুদ্র তোমায় নমস্কার
কেননা তুমি ই এই
বিবেকরুপে আমাদের মাঝে অবস্থান
কর!
আরেকটি মন্ত্র কৃষকদের অভিনন্দন
জানাতে গিয়ে বলছে-
নমস্তে লাঙ্গলেভ্যো নম…
বিরুত্ক্ষেত্রিযনাশন্যপা…(অথর্ববেদ
২.৮.৪)
অর্থাত্ যারা লাঙ্গল ও চাষের
মাধ্যমে জমিতে ফসল ফলান তাদের
জানাই নমস্কার।
অভিবাদনরুপে নমস্কার প্রদানের
উত্কৃষ্ট উদাহরন যজুর্বেদের
নিম্নলিখিত মন্ত্রটি-
নমো জ্যেষ্ঠায় চ কনিষ্ঠায় চ
নমং পূর্বজায় চাপরজায চ
নমো মধ্যমায় চাপগল্ভায় চ
নমো জঘন্যায় চ বুধ্ন্যায় চ।।(যজুর্বেদ
১৬.৩২)
অনুবাদ-নমস্কার
জ্যেষ্ঠদেরকে,নমস্কার
কনিষ্ঠদেরকে,নমস্কার
উচ্চবিত্ত,মধ্যবিত্ত,ধনী-
গরীব,জ্ঞানী,স্বল্পজ্ঞানী সকলকে!
অর্থাত্ এ
থেকে আমরা জানতে পারি যে
নমস্কার এমন ই এক অনন্য অভিবাদন
যাতে ধনী-গরীব,ছোট-বড়,শিক্ষিত-
অশিক্ষিত ভেদ নেই।যে কেউ ই
এটা যে কাউকে দিতে পারে।
আমাদের বৈদিক ঋষিগন সকলেই
নমস্কার দিয়ে অভিবাদন
জানাতেন,শ্রীরাম,শ্রীকৃষ্ণ সকলেই
নমস্তে ব্যবহার করতেন অভিবাদন
জানাতেন।আর তার ই ভক্তরুপ
ব্যক্তিগন আজ হিন্দুসমাজে নিয়ম চালু
করছে নমস্কার না বলে ‘হরে কৃষ্ণ’
ইত্যাদি নিজেদের
বানানো কথা বলতে।অথচ শ্রীকৃষ্ণ
নিজেও তাঁর ভক্তদেরকে নমস্কার বাদ
দিয়ে ‘হরে কৃষ্ণ’ বলতে বলেন নি।ঈশ্বর
অজ্ঞানীদের আলোর পথ দেখাক এই
কামনা থাকল।
তবে শেষ করার আগে একটি চমকপ্রদ
তথ্য দিয়ে শেষ করি।২০০২ সালের জুন
মাসে প্রকাশিত ইন্ট্যারন্যশনাল
ইয়োগা সোসাইটির
ম্যগাজিনে বলা হয়
যে তারা বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার
মাধ্যমে দেখেছেন যে নমস্কার
ভঙ্গীতে অর্থাত্ অঞ্জলি মুদ্রায়
প্রানায়াম বা ধ্যন করলে তা হাতের
মাংসপেশীকে শিথিল
করে এবং এটি মাংসপেশীজনিত
ব্যথা নিরাময়ে উপকারী।
ওঁ শান্তি শান্তি শান্তি

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *